১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাফ জয়ী অধিনায়কের মা মমতাজ হলেন সফল জননী

সফল জননী হিসেবে মমতাজ বেগমকে জয়িতার পুরস্কার তোলে দিচ্ছে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। ছবি- ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস।

সাফজয়ী অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফের বয়স তখন সাড়ে তিন বছর। সে সময় মারা যান বাবা আবু তালেব। তিনি পেশায় ছিলেন সাংবাদিক ও ফুটবলার। বিয়ের মাত্র ৮ বছর ৮ মাসের মাথায় স্বামীকে হারিয়ে রাজ্যের অন্ধকার নেমে এসেছিল আসিফের মা মমতাজ বেগমের সংসারে। একদিকে স্বামী হারানোর শোক।অন্যদিকে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে কীভাবে পাড়ি দিবেন জীবনের বাকীটা সময় সে চিন্তাতেই দিন কাটতো মমতাজ বেগমের। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি।

 

স্বামীহারা সংসারে অনেক কষ্টে সন্তানদের লেখাপড়া করান মমতাজ বেগম। বড় ছেলে আরিফুল হক পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার ঐতিহ্য ধরে রেখে বর্তমানে তিনি একজন পেশারদার ফুটবলার ও সাংবাদিক। ময়মনসিংহ জেলা লীগের নিয়মিত ফুটবলার ও অধিনায়ক তিনি। পাশাপাশি দৈনিক খোলা কাগজের ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবেও কর্মরত আছেন আরিফ।

 

এছাড়াও দায়িত্ব পালন করছেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সম্পাদক হিসেবে। চলতি বছর ছোট ছেলে আশরাফুল হক আসিফের নেতৃত্বে স্বাগতিক নেপালকে ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের যুবারা। আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। লেখাপড়া করিয়ে বড় মেয়ে তাহমিনা আক্তার হিমিকে উপযুক্ত পাত্রের কাছে বিয়েও দিয়েছেন। স্বামীকে হারিয়েও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশ সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলার পিছনে মা মমতাজ বেগমের অবদান ছিল অপরিসীম। গত ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবসে উপজেলা পর্যায়ে ২০২৪ সালে সফল জননী ক্যাটাগরিতে জয়িতার সম্মাননা দেওয়া হয় মমতাজ বেগমকে। তাকে জয়িতার সম্মাননা পুরস্কার ও সনদ তোলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার,পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসাইন ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ্জহুরা। মমতাজ বেগমের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামে।

 

সাফজয়ী অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফ জানালেন সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে মায়ের সংগ্রামের কাহিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের তিন ভাই-বোনকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসতে মা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ওই সময় তিনি কষ্ট না করলে আমরা এত দূর আসতে পারতাম না।’ এমন মায়ের সন্তান হয়ে তাঁরা গর্বিত।

মমতাজ বেগম বলেন,‘ ১৯৯৩ সালে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের ৮ বছর ৮ মাসের সময় আমার স্বামী মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর সব সময় চেয়েছি, আমার সন্তানেরা যেন তার বাবার মতো হয়। ওরা যেন দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারে। তাই কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করেয়েছি। স্বামীর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে ওদের খেলাধুলার দিকে মনোনিবেশ করিয়েছি। বড় ছেলে খেলাধুলার পাশাপাশি সাংবাদিকতাও করছে। আমার সন্তানেরা দেশের ও সমাজের কাজে লেগেছে, সেটাই আমার জন্য আনন্দের। তাদের জন্য আমি কোনো দিন এমন সম্মান পাব, সেটা তো কখনো ভাবিনি। সফল জননীর সম্মাননা পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।’

 

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ্জহুরা বলেন,’ স্বামীকে হারিয়ে সন্তানদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের কল্যাণে নিয়োজিত করায় মমতাজ বেগমকে সফল জননীর সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে স্বামীকে হারিয়ে তিন সন্তানকে নিয়ে মমতাজ বেগমকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তার সন্তানেরা এখন দেশজোড়া খেলোয়াড়। সত্যিই তিনি একজন আদর্শ মায়ের অনুপ্রেরণা। মমতাজ বেগমকে সেরা সেরা জীননী নির্বাচিত করতে পেরে উপজেলা প্রশাসন এবং আমি নিজেও গর্ববোধ করছি।’

 

ট্যাগ :

আটপাড়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ অনুষ্ঠিত

সাফ জয়ী অধিনায়কের মা মমতাজ হলেন সফল জননী

পোষ্টের সময় : ০৪:৪৭:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সাফজয়ী অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফের বয়স তখন সাড়ে তিন বছর। সে সময় মারা যান বাবা আবু তালেব। তিনি পেশায় ছিলেন সাংবাদিক ও ফুটবলার। বিয়ের মাত্র ৮ বছর ৮ মাসের মাথায় স্বামীকে হারিয়ে রাজ্যের অন্ধকার নেমে এসেছিল আসিফের মা মমতাজ বেগমের সংসারে। একদিকে স্বামী হারানোর শোক।অন্যদিকে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে কীভাবে পাড়ি দিবেন জীবনের বাকীটা সময় সে চিন্তাতেই দিন কাটতো মমতাজ বেগমের। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি।

 

স্বামীহারা সংসারে অনেক কষ্টে সন্তানদের লেখাপড়া করান মমতাজ বেগম। বড় ছেলে আরিফুল হক পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার ঐতিহ্য ধরে রেখে বর্তমানে তিনি একজন পেশারদার ফুটবলার ও সাংবাদিক। ময়মনসিংহ জেলা লীগের নিয়মিত ফুটবলার ও অধিনায়ক তিনি। পাশাপাশি দৈনিক খোলা কাগজের ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবেও কর্মরত আছেন আরিফ।

 

এছাড়াও দায়িত্ব পালন করছেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সম্পাদক হিসেবে। চলতি বছর ছোট ছেলে আশরাফুল হক আসিফের নেতৃত্বে স্বাগতিক নেপালকে ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের যুবারা। আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। লেখাপড়া করিয়ে বড় মেয়ে তাহমিনা আক্তার হিমিকে উপযুক্ত পাত্রের কাছে বিয়েও দিয়েছেন। স্বামীকে হারিয়েও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশ সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলার পিছনে মা মমতাজ বেগমের অবদান ছিল অপরিসীম। গত ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবসে উপজেলা পর্যায়ে ২০২৪ সালে সফল জননী ক্যাটাগরিতে জয়িতার সম্মাননা দেওয়া হয় মমতাজ বেগমকে। তাকে জয়িতার সম্মাননা পুরস্কার ও সনদ তোলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার,পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসাইন ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ্জহুরা। মমতাজ বেগমের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামে।

 

সাফজয়ী অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফ জানালেন সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে মায়ের সংগ্রামের কাহিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের তিন ভাই-বোনকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসতে মা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ওই সময় তিনি কষ্ট না করলে আমরা এত দূর আসতে পারতাম না।’ এমন মায়ের সন্তান হয়ে তাঁরা গর্বিত।

মমতাজ বেগম বলেন,‘ ১৯৯৩ সালে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের ৮ বছর ৮ মাসের সময় আমার স্বামী মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর সব সময় চেয়েছি, আমার সন্তানেরা যেন তার বাবার মতো হয়। ওরা যেন দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারে। তাই কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করেয়েছি। স্বামীর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে ওদের খেলাধুলার দিকে মনোনিবেশ করিয়েছি। বড় ছেলে খেলাধুলার পাশাপাশি সাংবাদিকতাও করছে। আমার সন্তানেরা দেশের ও সমাজের কাজে লেগেছে, সেটাই আমার জন্য আনন্দের। তাদের জন্য আমি কোনো দিন এমন সম্মান পাব, সেটা তো কখনো ভাবিনি। সফল জননীর সম্মাননা পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।’

 

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ্জহুরা বলেন,’ স্বামীকে হারিয়ে সন্তানদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের কল্যাণে নিয়োজিত করায় মমতাজ বেগমকে সফল জননীর সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে স্বামীকে হারিয়ে তিন সন্তানকে নিয়ে মমতাজ বেগমকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তার সন্তানেরা এখন দেশজোড়া খেলোয়াড়। সত্যিই তিনি একজন আদর্শ মায়ের অনুপ্রেরণা। মমতাজ বেগমকে সেরা সেরা জীননী নির্বাচিত করতে পেরে উপজেলা প্রশাসন এবং আমি নিজেও গর্ববোধ করছি।’