আফ্রিকান দেশ উগান্ডায় এক রহস্যময় নতুন সংক্রামক রোগ দেখা দিয়েছে। দেশটির বুন্ডিবুগিও জেলায় ছড়িয়ে পড়া এই অসুখ স্থানীয়ভাবে ‘ডিঙ্গা ডিঙ্গা’ নামে পরিচিত। ইতোমধ্যে তিন শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও কিশোরী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেতে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।
বার্তাসংস্থা আইএএনএস জানিয়েছে, এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র জ্বরের সঙ্গে শরীরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কাঁপুনি। এখান থেকেই অসুখের নামকরণ হয়েছে। স্থানীয় শব্দ ডিঙ্গা ডিঙ্গার অর্থ ‘নাচের মতো শরীর নড়াচড়া করা’। এই অসুখে আক্রান্তদের চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। কয়েকজন রোগী পক্ষাঘাতের শিকার হয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, আক্রান্তদের শরীর এতটাই কাঁপতে থাকে যে হাঁটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। রোগের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
উগান্ডার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে প্রথমবার ডিঙ্গা ডিঙ্গা রোগের কথা জানা যায়। আক্রান্তদের মধ্যে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, সর্দি-কাশি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, সারা শরীরে ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা, করোনাভাইরাস, ম্যালেরিয়া, হাম হলে যেরকম শ্বাসকষ্ট হয়, ডিঙ্গা ডিঙ্গা রোগেও সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
আপাতত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে রোগীরা সুস্থ হতে পারছেন। স্থানীয়রা অনেকে ভেষজ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে বুন্ডিবুগিও জেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. কিয়িতা ক্রিস্টোফার বলেছেন, এই রোগের জন্য ভেষজ ওষুধ কার্যকর, এমন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। আক্রান্তদের আমি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সেবা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
সংক্রমণ রোধে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, আক্রান্তদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলা ও নতুন কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষকে জানাতে অনুরোধ করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
রোগীদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও ডায়াগনসিস করা হয়নি। আপাতত বুন্ডিবুগিও জেলার বাইরে সংক্রমণ ছড়ায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ড. ক্রিস্টোফার।
১৫১৮ সালের ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গের ‘ড্যান্সিং প্লেগের’ সঙ্গে ডিঙ্গা ডিঙ্গার উপসর্গের তুলনা করা হচ্ছে। ওই রোগে আক্রান্তদের দেহ নাচের মত অনবরত কাঁপতে থাকত। দিনের পর দিন এভাবে নড়াচড়ার পর ক্লান্ত হয়ে অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন।
এদিকে, কঙ্গোতে আরেকটি অজানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৩৯৪ জন আক্রান্ত ও ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া ও শরীর ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
এই দুই প্রাদুর্ভাবের মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে উগান্ডার স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।