ময়মনসিংহ ১১:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়

ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। জন্ম হলো নতুন রূপকথার। দুই যুগের টেস্ট ইতিহাসে যা আগে কখনো হয়নি, তাই হলো এবার। পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবার বিজয় নিশান উড়াল টাইগাররা, সাকিব-মুশফিকরা দিলেন নতুন বাংলাদেশকে অবিস্মরণীয় জয় উপহার।

পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো টেস্ট তো নয়ই, তাদের মাটিতেও কোনো জয়ই ছিল না বাংলাদেশের। তবে এবার ঘোচাল সেই আক্ষেপ, ফুরালো হাহাকার। সিরিজের প্রথম টেস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যা উইকেটের ব্যবধানে টাইগারদের সবচেয়ে বড় জয়।

রোববার (২৫ আগস্ট) ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে টেস্টের পঞ্চম দিন শুরু করে পাকিস্তান। ৯ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ১১৭ রানের লিড ভাঙতে পারে বটে, তবে বেশিদূর এগোতে পারেনি। ৫৫.৫ ওভারে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় তারা। জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন তখন মাত্র ৩০ রান।

যা খুব সহজভাবেই পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। কোনো বিপদ আসতে দেননি জাকির হাসান-সাদমান ইসলাম জুটি। ছোট এই লক্ষ্য ৬.৩ ওভারেই ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। জাকির ২৬ বলে ১৫ ও ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন সাদমান। এই জয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

ভাগ্য নির্ধারণী দিনের দ্বিতীয় ওভারেই টাইগাররা পেয়ে যায় উইকেটের দেখা। পাকিস্তান অধিনায়ককে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম উপলক্ষ এনে দেন হাসান মাহমুদ। ৩৭ বলে ১৪ রান করে শান মাসুদ ফেরেন লিটনকে ক্যাচ দিয়ে। সেখান থেকেই পাকিস্তানের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া শুরু।

পরের ওভারে আবারো উদযাপনে মাততে পারত বাংলাদেশ। শরিফুল ইসলামের বলে উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ দেন বাবর আজম, যা লুফে নিতে ব্যর্থ হন লিটন। অন্যথায় শূন্য রানেই ফিরতে পারতেন পাকিস্তানি এই তারকা ব্যাটার।

তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। জীবন পেয়েও বাবর খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি, ফিরতে হয় নাহিদ রানার ১৪৬ কিমি গতিবেগের বলে বোল্ড হয়ে। ফেরার আগে ৫০ বলে ২২ রান করেন বাবর।

পরের ওভারেই পাকিস্তানকে আরো একটা ধাক্কা দেয় বাংলাদেশ। এবার উইকেট শিকারী সাকিব আল হাসান। প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানের ইনিংস খেলা সৌদ শাকিলকে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরান তিনি। ৬৭ রানে ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

এই মুহূর্তে পাকিস্তানকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। মনে হচ্ছিল দু’জনে মিলে গড়তে পারেন বড় কোনো জুটি। চেষ্টাও শুরু করেছিলেন। তবে বেশিদূর আগাতে দেননি সাকিন। দুই ব্যাটারের ৩৭ রানের জুটি ভাঙেন তিনি।

৩৭ রানে আউট হয়ে ফেরেন শফিক। পরের ওভারেই মিরাজের বলে ডাক মারেন সালমান আগা। তাতে প্রথম সেশন শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটের বিনিময়ে ১০৮ রান। মধ্যাহ্নভোজের পরপরই শাহিন আফ্রিদি আর নাসিম শাহকে ফেরান মিরাজ-সাকিব জুটি।

পাকিস্তানের হয়ে একাই লড়াই চালিয়ে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। আগের ইনিংসে ১৭১ রানের ইনিংস খেলা রিজওয়ান এই ইনিংসেও তুলে নেন ফিফটি। ৮০ বলে খেলেন ৫১ রানের ইনিংস। তাকেও ফেরান মিরাজ। এরপর রানের খাতা খোলার আগেই মোহাম্মদ আলিকে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে অলআউট করে দেন মিরাজ।

মেহেদী মিরাজ ৪ ও সাকিব আল হাসান নেন ৩ উইকেট। একটা করে উইকেট নেন শরিফুল, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা।

এর আগে প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ৫৬৫ রান করে বাংলাদেশ। টাইগাররা লিড নেয় ১১৭ রানের।

সেই যে মুলতান টেস্ট হারের দুঃখ ২০০৩ থেকে বুকে জমিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ, আজ ২১ বছর পর যেন তার কারাগার থেকে বেরিয়ে এল টাইগাররা।

উল্লেখ্য, পাকিস্তান নবম প্রতিপক্ষ, যাদের টেস্টে হারাল বাংলাদেশ। বাকি থাকল শুধু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটি মাত্র সপ্তম জয়, সব মিলিয়ে ২০তম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

মাজারের শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিসিদের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়

Update Time : ০২:৩৯:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। জন্ম হলো নতুন রূপকথার। দুই যুগের টেস্ট ইতিহাসে যা আগে কখনো হয়নি, তাই হলো এবার। পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবার বিজয় নিশান উড়াল টাইগাররা, সাকিব-মুশফিকরা দিলেন নতুন বাংলাদেশকে অবিস্মরণীয় জয় উপহার।

পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো টেস্ট তো নয়ই, তাদের মাটিতেও কোনো জয়ই ছিল না বাংলাদেশের। তবে এবার ঘোচাল সেই আক্ষেপ, ফুরালো হাহাকার। সিরিজের প্রথম টেস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যা উইকেটের ব্যবধানে টাইগারদের সবচেয়ে বড় জয়।

রোববার (২৫ আগস্ট) ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে টেস্টের পঞ্চম দিন শুরু করে পাকিস্তান। ৯ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ১১৭ রানের লিড ভাঙতে পারে বটে, তবে বেশিদূর এগোতে পারেনি। ৫৫.৫ ওভারে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় তারা। জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন তখন মাত্র ৩০ রান।

যা খুব সহজভাবেই পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। কোনো বিপদ আসতে দেননি জাকির হাসান-সাদমান ইসলাম জুটি। ছোট এই লক্ষ্য ৬.৩ ওভারেই ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। জাকির ২৬ বলে ১৫ ও ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন সাদমান। এই জয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

ভাগ্য নির্ধারণী দিনের দ্বিতীয় ওভারেই টাইগাররা পেয়ে যায় উইকেটের দেখা। পাকিস্তান অধিনায়ককে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম উপলক্ষ এনে দেন হাসান মাহমুদ। ৩৭ বলে ১৪ রান করে শান মাসুদ ফেরেন লিটনকে ক্যাচ দিয়ে। সেখান থেকেই পাকিস্তানের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া শুরু।

পরের ওভারে আবারো উদযাপনে মাততে পারত বাংলাদেশ। শরিফুল ইসলামের বলে উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ দেন বাবর আজম, যা লুফে নিতে ব্যর্থ হন লিটন। অন্যথায় শূন্য রানেই ফিরতে পারতেন পাকিস্তানি এই তারকা ব্যাটার।

তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। জীবন পেয়েও বাবর খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি, ফিরতে হয় নাহিদ রানার ১৪৬ কিমি গতিবেগের বলে বোল্ড হয়ে। ফেরার আগে ৫০ বলে ২২ রান করেন বাবর।

পরের ওভারেই পাকিস্তানকে আরো একটা ধাক্কা দেয় বাংলাদেশ। এবার উইকেট শিকারী সাকিব আল হাসান। প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানের ইনিংস খেলা সৌদ শাকিলকে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরান তিনি। ৬৭ রানে ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

এই মুহূর্তে পাকিস্তানকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। মনে হচ্ছিল দু’জনে মিলে গড়তে পারেন বড় কোনো জুটি। চেষ্টাও শুরু করেছিলেন। তবে বেশিদূর আগাতে দেননি সাকিন। দুই ব্যাটারের ৩৭ রানের জুটি ভাঙেন তিনি।

৩৭ রানে আউট হয়ে ফেরেন শফিক। পরের ওভারেই মিরাজের বলে ডাক মারেন সালমান আগা। তাতে প্রথম সেশন শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটের বিনিময়ে ১০৮ রান। মধ্যাহ্নভোজের পরপরই শাহিন আফ্রিদি আর নাসিম শাহকে ফেরান মিরাজ-সাকিব জুটি।

পাকিস্তানের হয়ে একাই লড়াই চালিয়ে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। আগের ইনিংসে ১৭১ রানের ইনিংস খেলা রিজওয়ান এই ইনিংসেও তুলে নেন ফিফটি। ৮০ বলে খেলেন ৫১ রানের ইনিংস। তাকেও ফেরান মিরাজ। এরপর রানের খাতা খোলার আগেই মোহাম্মদ আলিকে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে অলআউট করে দেন মিরাজ।

মেহেদী মিরাজ ৪ ও সাকিব আল হাসান নেন ৩ উইকেট। একটা করে উইকেট নেন শরিফুল, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা।

এর আগে প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ৫৬৫ রান করে বাংলাদেশ। টাইগাররা লিড নেয় ১১৭ রানের।

সেই যে মুলতান টেস্ট হারের দুঃখ ২০০৩ থেকে বুকে জমিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ, আজ ২১ বছর পর যেন তার কারাগার থেকে বেরিয়ে এল টাইগাররা।

উল্লেখ্য, পাকিস্তান নবম প্রতিপক্ষ, যাদের টেস্টে হারাল বাংলাদেশ। বাকি থাকল শুধু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটি মাত্র সপ্তম জয়, সব মিলিয়ে ২০তম।