০১:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নান্দাইলে চাঞ্চল্যকর পাপিয়া হত্যার আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ

ময়মনসিংহের নান্দাইলে ধর্ষন ও নির্যাতনে মাদ্রাসা ছাত্রী পাপিয়া হত্যা মামলার আসামিরা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় নিহতের পরিবার। সব আসামিকে গ্রেপ্তার ও ন্যায়বিচারের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন পাপিয়ার পরিবার।

 

এই মামলায় প্রধান আসামি হোসাইনসহ ধরাছোঁয়ার বাইরে অন্য সকল আসামি। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পাপিয়ার মৃত্যুর পর থেকেই আসামীরা পলাতক রয়েছেন। মামলা হলেও আসামী ধরার তেমন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মাদ্রাসা ছাত্রী পাপিয়া হত্যার পর এ ঘটনা নিয়ে এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পাপিয়া হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও তাদের বিচারের দাবিতে নান্দাইলে এলাকাবাসী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

 

জানাগেছে, উক্ত ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ৬ জনের নামে একটি নিয়মিত হত্যা মামলা নথিভূক্ত করা হয়েছে। পাপিয়ার পিতা মো. আবুল কালাম বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলা নং-০৬ (১২) ২০২৪ ধারা ৩৪১/৩০২/৩৪ পেনাল কোড। মামলার আসামীরা হলেন নারায়নপুর গ্রামের হোসাইন মিয়া, হানিফ মিয়া, রওশনারা, কচুরী চরপাড়া গ্রামের জজের পাপের পুত্র শাহজাহান মিয়া, মৃত আহাম্মদ হোসেনের পুত্র রতন মিয়া, চরপাড়া বগুরীকান্দা গ্রামের তাজু মিয়ার পুত্র গোলাপ মিয়া। জানাযায়, উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের মো. আবুল কালামের মেয়ে পাপিয়া আক্তার (১৪) উপজেলার বাকচান্দা ফাজিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। পাশেই স্থানীয় বাকচান্দা আব্দুস সামাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র কচুরী গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার ছেলে হোসাইন (১৯) তাকে প্রেম নিবেদনের পর ব্যর্থ হয়ে গত জুন মাসের এক তারিখে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এ অবস্থায় দীর্ঘ ৩ মাসের ও বেশি সময় অজ্ঞাত স্থানে রেখে গত ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ির সামনে সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।

 

সেখান থেকে ময়মনসিংহ ও পরে ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখানে গত ১৫ দিন চিকিৎসার সময় বাম চোখ বাঁচাতে ডান চোখটি তুলে ফেলেন চিকিৎসক। কিন্তু অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করিয়ে তার পরিবার পাপিয়াকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক সঙ্গে দিয়ে দেন চোখের কর্নিয়া। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে ওই চোখের কর্নিয়া নিরাপত্তা ও সতেজ থাকার জন্য বাড়ির ফ্রিজে রাখা হয়। ডাক্তারের পরামর্শে পরিবার অপেক্ষায় ছিল যদি মেয়েটি সুস্থ হয়, তাহলে আহত চোখে কর্নিয়া স্থাপন করা যাবে। কিন্তু সবই ভেস্তে গেল। দীর্ঘ দিন যন্ত্রণার পর গত ১৬ ডিসেম্বর পরপারে চলে যায় পাপিয়া।

 

পাপিয়ার পিতা আবুল কালাম বলেন, মামলা হওয়ার পর এখন পর্যন্ত একজন আসামীও ধরতে পারছেনা পুলিশ। আইন কি করতাছে তাতো আমি জানিনা। আসামিদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলেই আমার ও আমার মেয়ের আত্মার শান্তি পাইবো। পাপিয়ার মা হাদিছা আক্তার কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।

নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ফরিদ আহম্মেদ জানান, পাপিয়ার হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে আসামি গ্রেফতাারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

 

 

ট্যাগ :
অধিক পঠিত

আটপাড়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ অনুষ্ঠিত

নান্দাইলে চাঞ্চল্যকর পাপিয়া হত্যার আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ

পোষ্টের সময় : ০৩:৪৩:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ময়মনসিংহের নান্দাইলে ধর্ষন ও নির্যাতনে মাদ্রাসা ছাত্রী পাপিয়া হত্যা মামলার আসামিরা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় নিহতের পরিবার। সব আসামিকে গ্রেপ্তার ও ন্যায়বিচারের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন পাপিয়ার পরিবার।

 

এই মামলায় প্রধান আসামি হোসাইনসহ ধরাছোঁয়ার বাইরে অন্য সকল আসামি। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পাপিয়ার মৃত্যুর পর থেকেই আসামীরা পলাতক রয়েছেন। মামলা হলেও আসামী ধরার তেমন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মাদ্রাসা ছাত্রী পাপিয়া হত্যার পর এ ঘটনা নিয়ে এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পাপিয়া হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও তাদের বিচারের দাবিতে নান্দাইলে এলাকাবাসী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

 

জানাগেছে, উক্ত ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ৬ জনের নামে একটি নিয়মিত হত্যা মামলা নথিভূক্ত করা হয়েছে। পাপিয়ার পিতা মো. আবুল কালাম বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলা নং-০৬ (১২) ২০২৪ ধারা ৩৪১/৩০২/৩৪ পেনাল কোড। মামলার আসামীরা হলেন নারায়নপুর গ্রামের হোসাইন মিয়া, হানিফ মিয়া, রওশনারা, কচুরী চরপাড়া গ্রামের জজের পাপের পুত্র শাহজাহান মিয়া, মৃত আহাম্মদ হোসেনের পুত্র রতন মিয়া, চরপাড়া বগুরীকান্দা গ্রামের তাজু মিয়ার পুত্র গোলাপ মিয়া। জানাযায়, উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের মো. আবুল কালামের মেয়ে পাপিয়া আক্তার (১৪) উপজেলার বাকচান্দা ফাজিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। পাশেই স্থানীয় বাকচান্দা আব্দুস সামাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র কচুরী গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার ছেলে হোসাইন (১৯) তাকে প্রেম নিবেদনের পর ব্যর্থ হয়ে গত জুন মাসের এক তারিখে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এ অবস্থায় দীর্ঘ ৩ মাসের ও বেশি সময় অজ্ঞাত স্থানে রেখে গত ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ির সামনে সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।

 

সেখান থেকে ময়মনসিংহ ও পরে ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখানে গত ১৫ দিন চিকিৎসার সময় বাম চোখ বাঁচাতে ডান চোখটি তুলে ফেলেন চিকিৎসক। কিন্তু অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করিয়ে তার পরিবার পাপিয়াকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক সঙ্গে দিয়ে দেন চোখের কর্নিয়া। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে ওই চোখের কর্নিয়া নিরাপত্তা ও সতেজ থাকার জন্য বাড়ির ফ্রিজে রাখা হয়। ডাক্তারের পরামর্শে পরিবার অপেক্ষায় ছিল যদি মেয়েটি সুস্থ হয়, তাহলে আহত চোখে কর্নিয়া স্থাপন করা যাবে। কিন্তু সবই ভেস্তে গেল। দীর্ঘ দিন যন্ত্রণার পর গত ১৬ ডিসেম্বর পরপারে চলে যায় পাপিয়া।

 

পাপিয়ার পিতা আবুল কালাম বলেন, মামলা হওয়ার পর এখন পর্যন্ত একজন আসামীও ধরতে পারছেনা পুলিশ। আইন কি করতাছে তাতো আমি জানিনা। আসামিদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলেই আমার ও আমার মেয়ের আত্মার শান্তি পাইবো। পাপিয়ার মা হাদিছা আক্তার কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।

নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ফরিদ আহম্মেদ জানান, পাপিয়ার হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে আসামি গ্রেফতাারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।