০৮:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদারগঞ্জের চরাঞ্চলে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ফুটন্ত সূর্যমুখী

মাদারগঞ্জে সূর্য্যমুখি ক্ষেত। ছবি- ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস।

 

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় সূর্যমুখী চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। উপজেলার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হাসছে সূর্যমুখী ফুল। এই সূর্যমুখীকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। সূর্যমুখী চাষে তেলবীজ উৎপাদনের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে কৃষি পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাও। জনপ্রিয় এই সূর্যমুখী ফুল দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত দর্শনার্থী।

দূর থেকে সূর্যমুখীর খেত দেখলে মনে হবে যেন বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে বাস্তবায়ন হচ্ছে সূর্যমুখী প্রদর্শনী।

এছাড়া কৃষকদের নতুন ফসল চাষে দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ। ভবিষ্যতে কৃষি পর্যটনেও সম্ভাবনা সৃষ্টির পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে কাজ করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ১৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। আর গত বছর মাত্র ১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছিল। হাইসান-৩৩, আরডিএস-২৭৫সহ বেশ কয়েকটি জাতের সূর্যমুখীর চাষ করেছেন কৃষকরা। সূর্যমুখী চাষিদের কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এ উপজেলার চাষিরা আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করতে পারবে।

চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি সূর্যমুখীর চাষ করেছেন বালিজুড়ী ইউনিয়নের কামারিয়ার চর, চরশুভগাছা, সুখনগরী এলাকার কৃষকরা। পার্টনার প্রকল্প ও বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা গেছে, সূর্যমুখী ফুলের তেল অত্যন্ত পুষ্টিকর। এ তেলে ওমেগা-৯, ওমেগা-৬ ও লিনোলিক-জাতীয় অ্যাসিড বিদ্যমান। এ ছাড়া শতভাগ ফ্যাটমুক্তসহ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, পানি, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’ ও মিনারেল রয়েছে; যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির জন্য বেশ উপকারী। বালিজুড়ী ইউনিয়নের কামারিয়ার চর, চরশুভগাছা, সুখনগরী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৬-৭ ফুট লম্বা গাছের সবুজ পাতার উপরে হলুদ সূর্যমুখীর নয়নাভিরাম দৃশ্য। সূর্য যখন হেলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে, ঠিক সূর্যের দিকেই তাকিয়ে আছে ফুলগুলো।

সূর্যের আলোতে ফুলগুলো তাদের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পথচারীদের অভিভ‚ত করছে। দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগান নানান বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সূর্যমুখী ফুলের খেতগুলো এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আসছেন, কেউ বা আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। সুখস্মৃতি ধরে রাখতে নানা ভঙ্গিতে মুঠোফোন কিংবা ক্যামেরায় ছবি তুলছেন তারা।

সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, বান্ধবীদের সাথে নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের খেত দেখতে এসেছি। আগে কখনই এত বিশাল জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করতে দেখিনি। সবুজের মাঠে হলুদ আর সবুজ মিলে-মিশে অপরূপ এ দৃশ্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। বান্ধবীদের সাথে নিয়ে এমন এক মায়াবি দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে পেরে অনেক খুশি আমি। কামারিয়ার চর এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা বিজয় বলেন, আগে জানতাম, কেবল ফুল হিসেবে সূর্যমুখী লাগানো হয়। পরে কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জেনেছি, সূর্যমুখীবীজ থেকে তেল পাওয়া যায়, যা তুলনামূলক দামি। ন্যায্যমূল্যে বীজ বিক্রির সুযোগ পেলে কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষে অনেক বেশি আগ্রহী হবেন।

সূখনগরী এলাকার সূর্যমুখী চাষি মির্জা হুমায়ুন কবীর জানান, সরকারি প্রনোদনা ও প্রদশনীর মাধ্যমে বীজ ও সার পেয়ে এবছর প্রথম ২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন তিনি। প্রথমে তেমন আগ্রহ না থাকলেও ফলন দেখে অনেক ভালো লাগছে। প্রতিটি গাছে অনেক বড় বড় ফুল হয়েছে। কম খরচে অধিক ফসল পাওয়া যায় ও সূর্যমুখীর তেলের চাহিদা রয়েছে এ কারণে আমরা এই ফসলটি আবাদ করেছি।

এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখতে ও ছবি তুলতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অনেকেই। আবহাওয়া ও বাজার ভালো থাকলে অনেক টাকা লাভ হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহাদুল ইসলাম বলেন, কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে লাভবান হওয়ায় এবং কৃষি অফিসের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন। প্রতি বছরই এ উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলনও ভালো দেখা যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে চাষিরা ভালো ফলন পাওয়ার পাশাপাশি তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পেয়ে অধিক লাভবান হবেন। তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখী তেলের পুষ্টিগুণ যেমন বেশি তেমনি অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। অধিক হারে চাষ বৃদ্ধি করা গেলে পুষ্টি চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে।

পাশাপাশি ভোজ্যতেলের জন্য বিদেশ নির্ভরতা কমে যাবে। মাদারগঞ্জ উপজেলার মাটি সূর্যমুখী চাষে উপযোগী। আগামীতে কেউ নতুন করে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হলে তাদেরকে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

 

 

ট্যাগ :
অধিক পঠিত

মাদারগঞ্জের চরাঞ্চলে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ফুটন্ত সূর্যমুখী

পোষ্টের সময় : ১২:১৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

 

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় সূর্যমুখী চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। উপজেলার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হাসছে সূর্যমুখী ফুল। এই সূর্যমুখীকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। সূর্যমুখী চাষে তেলবীজ উৎপাদনের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে কৃষি পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাও। জনপ্রিয় এই সূর্যমুখী ফুল দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত দর্শনার্থী।

দূর থেকে সূর্যমুখীর খেত দেখলে মনে হবে যেন বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে বাস্তবায়ন হচ্ছে সূর্যমুখী প্রদর্শনী।

এছাড়া কৃষকদের নতুন ফসল চাষে দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ। ভবিষ্যতে কৃষি পর্যটনেও সম্ভাবনা সৃষ্টির পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে কাজ করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ১৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। আর গত বছর মাত্র ১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছিল। হাইসান-৩৩, আরডিএস-২৭৫সহ বেশ কয়েকটি জাতের সূর্যমুখীর চাষ করেছেন কৃষকরা। সূর্যমুখী চাষিদের কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এ উপজেলার চাষিরা আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করতে পারবে।

চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি সূর্যমুখীর চাষ করেছেন বালিজুড়ী ইউনিয়নের কামারিয়ার চর, চরশুভগাছা, সুখনগরী এলাকার কৃষকরা। পার্টনার প্রকল্প ও বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা গেছে, সূর্যমুখী ফুলের তেল অত্যন্ত পুষ্টিকর। এ তেলে ওমেগা-৯, ওমেগা-৬ ও লিনোলিক-জাতীয় অ্যাসিড বিদ্যমান। এ ছাড়া শতভাগ ফ্যাটমুক্তসহ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, পানি, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’ ও মিনারেল রয়েছে; যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির জন্য বেশ উপকারী। বালিজুড়ী ইউনিয়নের কামারিয়ার চর, চরশুভগাছা, সুখনগরী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৬-৭ ফুট লম্বা গাছের সবুজ পাতার উপরে হলুদ সূর্যমুখীর নয়নাভিরাম দৃশ্য। সূর্য যখন হেলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে, ঠিক সূর্যের দিকেই তাকিয়ে আছে ফুলগুলো।

সূর্যের আলোতে ফুলগুলো তাদের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পথচারীদের অভিভ‚ত করছে। দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগান নানান বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সূর্যমুখী ফুলের খেতগুলো এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আসছেন, কেউ বা আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। সুখস্মৃতি ধরে রাখতে নানা ভঙ্গিতে মুঠোফোন কিংবা ক্যামেরায় ছবি তুলছেন তারা।

সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, বান্ধবীদের সাথে নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের খেত দেখতে এসেছি। আগে কখনই এত বিশাল জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করতে দেখিনি। সবুজের মাঠে হলুদ আর সবুজ মিলে-মিশে অপরূপ এ দৃশ্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। বান্ধবীদের সাথে নিয়ে এমন এক মায়াবি দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে পেরে অনেক খুশি আমি। কামারিয়ার চর এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা বিজয় বলেন, আগে জানতাম, কেবল ফুল হিসেবে সূর্যমুখী লাগানো হয়। পরে কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জেনেছি, সূর্যমুখীবীজ থেকে তেল পাওয়া যায়, যা তুলনামূলক দামি। ন্যায্যমূল্যে বীজ বিক্রির সুযোগ পেলে কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষে অনেক বেশি আগ্রহী হবেন।

সূখনগরী এলাকার সূর্যমুখী চাষি মির্জা হুমায়ুন কবীর জানান, সরকারি প্রনোদনা ও প্রদশনীর মাধ্যমে বীজ ও সার পেয়ে এবছর প্রথম ২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন তিনি। প্রথমে তেমন আগ্রহ না থাকলেও ফলন দেখে অনেক ভালো লাগছে। প্রতিটি গাছে অনেক বড় বড় ফুল হয়েছে। কম খরচে অধিক ফসল পাওয়া যায় ও সূর্যমুখীর তেলের চাহিদা রয়েছে এ কারণে আমরা এই ফসলটি আবাদ করেছি।

এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখতে ও ছবি তুলতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অনেকেই। আবহাওয়া ও বাজার ভালো থাকলে অনেক টাকা লাভ হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহাদুল ইসলাম বলেন, কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে লাভবান হওয়ায় এবং কৃষি অফিসের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন। প্রতি বছরই এ উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলনও ভালো দেখা যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে চাষিরা ভালো ফলন পাওয়ার পাশাপাশি তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পেয়ে অধিক লাভবান হবেন। তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখী তেলের পুষ্টিগুণ যেমন বেশি তেমনি অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। অধিক হারে চাষ বৃদ্ধি করা গেলে পুষ্টি চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে।

পাশাপাশি ভোজ্যতেলের জন্য বিদেশ নির্ভরতা কমে যাবে। মাদারগঞ্জ উপজেলার মাটি সূর্যমুখী চাষে উপযোগী। আগামীতে কেউ নতুন করে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হলে তাদেরকে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।