রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত বাংলাদেশী তরুণ ইয়াসিন শেখের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানসহ একটি নতুন বসত ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
শনিবার (৫ এপ্রিল) দুপুর সোয়া ১টায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের মরিচালি গ্রামে নিহত ইয়াসিন শেখের পরিবারের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করে এই সহায়তা প্রদান করা হয়।
এ ঘটনায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, নিহত ইয়াসিন শেখ ছাত্রদলের কর্মী ছিল। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমারা এই পরিবারের খোঁজ খবর নিতে এসেছি। ইনশাআল্লাহ আগামী দিনেও নিহত ইয়াসিন শেখের পরিবারের পাশে থাকবে বিএনপি।
এতে উপস্থিত ছিলেন উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট নূরুল হক, আহমেদ তায়েবুর রহমান হিরুন, হাফেজ আজিজুল হক, হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবু জাফর মোহাম্মদ রাশেদ মিলন, আ: রহমান খান বাচ্চু, আলী আকবর আনিস, আব্দুর রহমান বাবুল, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নাসির উদ্দিন রুমন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কামাল আহমেদ, উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি তানজিল চৌধুরী লিলি প্রমূখ।
এসময় নিহত ইয়াসিন শেখের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা নিশ্চিত করে বিএনপি নেতৃবৃন্দের প্রতি দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে ইয়াসিন শেখের পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে ফেরার পথে পাশ্ববর্তী বাশাঁটি গ্রামে প্রয়াত গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহাগ চৌধুরীর কবর জিয়ারত করে মোতাহার হোসেন তালুকদারসহ সঙ্গীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, মরিচালি গ্রামের মৃত সত্তর মিয়ার ছোট ছেলে ইয়াসিন শেখ গত ২৭ মার্চ ইয়াসিন নিহত হলেও ঈদের পরদিন রাশিয়ায় থাকা ইয়াসিনের বন্ধু মেহেদীর মাধ্যমে এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয় পরিবার। এতে ইয়াসিনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
এর আগে গত বছর বিদেশ গিয়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেয় ইয়াসিন। এতে হঠাৎ মিশাইল হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ইয়াসিনসহ তার চার সহযোদ্ধার দেহ। গত ২৭ মার্চ ইউক্রেনে যুদ্ধরত অবস্থায় নিহত হয় ইয়াসিন শেখ।
নিহত ইয়াসিন শেখের চার ভাইবোনের মধ্যে দুইজন আগেই মারা গেছেন। মা আর বড় ভাইকে নিয়ে ছিলো তার সংসার। বড় ভাই ব্যবসায়ী রুহুল আমিন তার পড়াশোনা ও বিদেশযাত্রার খরচ বহন করেন।
রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেয়ার ছবি ও ভিডিও নিয়মিত তার ফেসবুকে আপলোড করতো ইয়াসিন। গত ১ মার্চ ফেসবুকে তার বাবা মৃত্যুবার্ষিকীতে রাশিয়া যাওয়া, সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া এবং তার স্বপ্নপূরণ নিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করে ইয়াসিন।
ইয়াসিন ভিডিওতে বলেন, গত বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়ায় একটি চায়না কোম্পানিতে চাকুরির জন্য আবেদন করে। গত সেপ্টেম্বর মাসে অফার লেটার পেয়ে চলে যায় রাশিয়া। মস্কো থেকে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার দুরের ওই কোম্পানিতে তিন মাস চাকুরির পর অনলাইনে আবেদন করে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক সৈনিক হিসেবে যোগ দেয়। দেশে না হলেও বিদেশে সৈনিক হয়ে বাবার স্বপ্নপূরণ হয় বলেও জানায় সে। ওই ভিডিও আওযামীলীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচারন ও তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের জন্যও দোয়া প্রার্থনা করেন ছাত্রদল কর্মী ইয়াসিন। সরকারি বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তার সাহস ও ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেয়ার মনোবল তৈরী হয় বলে জানায় সে। যুদ্ধে মৃত্যু হলেও তার কোন আফসোস থাকবে না বলেও ভিডিও জানায় ইয়াসিন। ওই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করার মাস না পেরুতেই যুদ্ধে ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় নিহত হয় ইয়াসিন।
