০৭:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কৃষকদল নেতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ শিল্পাঞ্চল: শিল্প প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত স্মাইল অ্যাপারেলস লিমিটেড নামক একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের অভিযোগ, বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের এক নেতা দীর্ঘদিন ধরে শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার, চাঁদাবাজি ও হুমকি দিয়ে আসছেন, যা পুরো শিল্পাঞ্চলে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

 

প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, স্থানীয় কৃষকদল নেতা মো. রিয়াজ উদ্দিন ওরফে রিয়াজ মিয়া নিয়মিত কারখানায় লোক পাঠিয়ে চাঁদা দাবি করেন এবং হুমকি দেন—চাঁদা না দিলে কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। রিয়াজ উদ্দিন একজন ভূমি দস্যু এবং বন বিভাগের জমি দখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রির নামে প্রতারণা করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে বন বিভাগের কর্মীদের মারধরের ঘটনাও রয়েছে, এবং তিনি বন বিভাগের একটি মামলায় ৪০ দিন কারাবাসের পর জামিনে মুক্ত হন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মো. রিয়াজ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে বিভিন্ন জায়গায় ভূমি দখল করে আসছিলেন। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি খাস জমি, বন বিভাগের জমি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করে নকল কাগজ তৈরি করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন। বন বিভাগের একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে তার নামে মামলা হয় এবং তিনি জেলও খাটেন। জামিনে মুক্তির পর তিনি আবারও এলাকায় দখল ও চাঁদাবাজির কার্যক্রম শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফ্যাক্টরির মালিকদের ওপর চাঁদার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

এসব বিষয়ে ওই শিল্প কারখানার পক্ষ থেকে ভালুকা মডেল থানা, সেনা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থানে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সোমবার রাত আনুমানিক ১১টায় রিয়াজের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রসহ তাদের কারখানার প্রধান ফটকে হামলা চালায়। নিরাপত্তাকর্মীদের বাধার মুখে তারা কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়ে যায়, যাতে কোনো পণ্য বা যানবাহন বাইরে বের হতে না পারে। পাশাপাশি তারা হুমকি দেয় যে, মাসিক চাঁদা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ফ্যাক্টরির কার্যক্রম চালানো যাবে না এবং তালাও খোলা যাবে না। পরদিন সকালে এলাকাবাসীর সহায়তায় তালা ভেঙে ফ্যাক্টরির কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হয়।

 

স্থানীয়রা জানান, মো. রিয়াজ উদ্দিন অতীতে আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হারুন-অর-রশিদ, শেখ সেলিমের একান্ত সহকারী দুর্জয়, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সাইদুরসহ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থেকে নানা অপকর্ম করেছেন। তবে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক দাবি করছেন। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা আতঙ্কিত, এবং বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ প্রশাসন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কৃষকদলের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা নিরাপদে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে পারেন।

 

এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষকদল নেতা পরিচয়দানকারী মো. রিয়াজ উদ্দিন ওরফে রিয়াজ মিয়া বলেন, ‘আমি স্মাইল অ্যাপারেলস লিমিটেড-এর কাছে টাকা পাবো।’ জমি ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

ভালুকা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আলহাজ্ব মো. মোর্শেদ আলম বলেন, ‘রিয়াজ একজন বাটপার ও প্রতারক। অনেক শিল্প মালিককে সে বন বিভাগের জমি কিনে বিপদে ফেলেছে। অনেকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে আত্মসাৎ করেছে। তার কারণে বিএনপির দুর্নাম হচ্ছে।’

 

ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামছুল হুদা খান জানান, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করছে। স্মাইল অ্যাপারেলস লিমিটেড-এর পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যাগ :

কৃষকদল নেতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ শিল্পাঞ্চল: শিল্প প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

পোষ্টের সময় : ০৭:১২:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫

ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত স্মাইল অ্যাপারেলস লিমিটেড নামক একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের অভিযোগ, বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের এক নেতা দীর্ঘদিন ধরে শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার, চাঁদাবাজি ও হুমকি দিয়ে আসছেন, যা পুরো শিল্পাঞ্চলে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

 

প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, স্থানীয় কৃষকদল নেতা মো. রিয়াজ উদ্দিন ওরফে রিয়াজ মিয়া নিয়মিত কারখানায় লোক পাঠিয়ে চাঁদা দাবি করেন এবং হুমকি দেন—চাঁদা না দিলে কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। রিয়াজ উদ্দিন একজন ভূমি দস্যু এবং বন বিভাগের জমি দখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রির নামে প্রতারণা করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে বন বিভাগের কর্মীদের মারধরের ঘটনাও রয়েছে, এবং তিনি বন বিভাগের একটি মামলায় ৪০ দিন কারাবাসের পর জামিনে মুক্ত হন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মো. রিয়াজ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে বিভিন্ন জায়গায় ভূমি দখল করে আসছিলেন। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি খাস জমি, বন বিভাগের জমি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করে নকল কাগজ তৈরি করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন। বন বিভাগের একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে তার নামে মামলা হয় এবং তিনি জেলও খাটেন। জামিনে মুক্তির পর তিনি আবারও এলাকায় দখল ও চাঁদাবাজির কার্যক্রম শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফ্যাক্টরির মালিকদের ওপর চাঁদার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

এসব বিষয়ে ওই শিল্প কারখানার পক্ষ থেকে ভালুকা মডেল থানা, সেনা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থানে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সোমবার রাত আনুমানিক ১১টায় রিয়াজের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রসহ তাদের কারখানার প্রধান ফটকে হামলা চালায়। নিরাপত্তাকর্মীদের বাধার মুখে তারা কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়ে যায়, যাতে কোনো পণ্য বা যানবাহন বাইরে বের হতে না পারে। পাশাপাশি তারা হুমকি দেয় যে, মাসিক চাঁদা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ফ্যাক্টরির কার্যক্রম চালানো যাবে না এবং তালাও খোলা যাবে না। পরদিন সকালে এলাকাবাসীর সহায়তায় তালা ভেঙে ফ্যাক্টরির কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হয়।

 

স্থানীয়রা জানান, মো. রিয়াজ উদ্দিন অতীতে আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হারুন-অর-রশিদ, শেখ সেলিমের একান্ত সহকারী দুর্জয়, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সাইদুরসহ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থেকে নানা অপকর্ম করেছেন। তবে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক দাবি করছেন। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা আতঙ্কিত, এবং বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ প্রশাসন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কৃষকদলের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা নিরাপদে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে পারেন।

 

এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষকদল নেতা পরিচয়দানকারী মো. রিয়াজ উদ্দিন ওরফে রিয়াজ মিয়া বলেন, ‘আমি স্মাইল অ্যাপারেলস লিমিটেড-এর কাছে টাকা পাবো।’ জমি ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

ভালুকা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আলহাজ্ব মো. মোর্শেদ আলম বলেন, ‘রিয়াজ একজন বাটপার ও প্রতারক। অনেক শিল্প মালিককে সে বন বিভাগের জমি কিনে বিপদে ফেলেছে। অনেকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে আত্মসাৎ করেছে। তার কারণে বিএনপির দুর্নাম হচ্ছে।’

 

ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামছুল হুদা খান জানান, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করছে। স্মাইল অ্যাপারেলস লিমিটেড-এর পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’