মো. এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ :
১৮ বছরের কিশোর জিয়ারুল ইসলাম। বাড়ির সামনে থেকে উঠেছিল ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে। গন্তব্য উচাখিলা বাজার। ইজিবাইকটি উচাখিলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস পেরুতেই পেছন থেকে লাঠি হাতে ধাওয়া করে একজন। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে প্রাণে বাঁচতে ইজিবাইক থেকে নেমেই উল্টোপথে বাড়ির দিকে দৌড় দেয় জিয়ারুল। দৌড়ে বাজারের মেসার্স রানা-রামিম এন্টারপ্রাইজের সামনে আসা মাত্রই অপর একজন লাঠি হাতে জিয়ারুলের মাথায় আঘাত করে।
তখন জিয়ারুল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়। ততক্ষণে লাঠিসোঁটা হাতে দৌড়ে আসে আরও তিনজন। শুরু হয় জিয়ারুলের ওপর বেদম পিটুনি। এ সময় বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জিয়ারুলকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জিয়ারুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের উচাখিলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জিয়ারুল ওই ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জিয়ারুল ও হক মিয়াদের শত্রুতা দীর্ঘদিনের। এর আগে গত ২২ অক্টোবর উচাখিলা ইউনিয়নে পুলিশের ওপর হামলার একটি মামলায় আসামি হয় জিয়ারুল।
গত সোমবার আদাতলে সেই মামলার হাজিরা দিয়ে এলাকায় আসে জিয়ারুল। ওইদিন আলাদিয়ার আলগী গ্রামের হক মিয়ার ছেলে রাশিদ ও রাসেল মিয়ার সাথে পূর্ব শত্রæতা ও পুলিশের ওপর হামলা-মামলার ঘটনার আসামি হওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার বাকবিতন্ডা হয়। পরে ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার জিয়ারুল উচাখিলা বাজারে তার বাবার কাপড়ের দোকানে যাওয়ার পথে ইজিবাইকে ধাওয়া করে হক মিয়ার দুই ছেলেসহ কয়েকজন। এসময় ইজিবাইক থেকে নেমে প্রাণে বাচতে দৌড় দিতেই জিয়ারুলকে লাঠিসোঁটা ও লোহার রড দিয়ে বেদম পিটিয়ে গুরুতর জখম করে।
পরে মঙ্গলবার আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু। জিয়ারুলের মৃত্যুর খবরে পাল্টা আক্রমণ করে তার লোকজন। দুপক্ষের সংঘর্ষে বিপরীত পক্ষের রাশিদ ও তার চাচাতো ভাই আনোয়ার হোসেন গুরুতর হন।দুজনকে ময়মনসিংহ মেডকেলে ভর্তি করা হলে রাশিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা রেফার্ড করে চিকিৎসকরা। রাসেলসহ বাকীরা পলাতক রয়েছে।
বুুধবার বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জিয়ারুলের মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তে শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে এলাকাবাসী বলছে, জিয়ারুল ও প্রতিপক্ষ হক মিয়ার ছেলেরাও কিশোরগ্যাং চক্রের সদস্য। পুলিশ জানায়, নিহত জিয়ারুলের নামে মাদকসহ ছয়টি মামলা রয়েছে থানায়। অপরদিকে জিয়ারুলের বাবা আলাল উদ্দিন ও মাহমুদা বেগম বলেন, ‘মানুষ মানুষকে এইভাবে পিটায়? না জানি আমার পুত(ছেলে) কতটা কষ্ট পাইয়্যা মরছে। যারা আমার ছেলেকে নির্মমভাবে মারছে আমরা তাদের বিচার চাই। এদের বিচার দেখে আমরা মরতে চাই।
এ প্রসঙ্গে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। ওই এলাকায় তদন্ত কাজে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।