উন্মুক্ত স্থানে ও গাছে ঝুলানো নানন্দিক লাইব্রেরী। তাতে সারি সারি বইয়ের তাক। সাজানো অনেক রকমের বই। তাক থেকে বই নিয়ে পড়ছেন সেবা নিতে আসা মানুষ। পড়া শেষে যথাস্থানে আবার রেখেও দিচ্ছেন। এমন দৃশ্য দেখা গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে।
রবিবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরের বিভিন্ন পয়েন্টে মোট তিনটি নান্দনিক মিনি লাইব্রেরি উদ্বোধন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘উদ্বোধনের পরপরই লাইব্রেরিগুলোতে বই প্রেমিদের ভীড়। কেউ বই পড়ছেন,আবার কেউ দেখছেন। পরিষদ চত্বরে দর্শনার্থীদের বসার গোল ঘরের সামনে ১টি,উপজেলা মসজিদের সামনে গাছে ঝুলানো একটি ও নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিচ তলার সিঁড়ি ঘেঁষে ১টিসহ মোট তিনটি নান্দনিক লাইব্রেরিতে শোভা পাচ্ছে বই। ইউএনও’র কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে তরুণ প্রজন্মসহ সবাই ব্যস্ত ভার্চুয়াল জগতে। অনলাইন জগতে অনেকেই হচ্ছেন বিপদগামীও। ঠিক এমন সময় উপজেলা পরিষদে সেবা নিতে আসা ও বিকেলে উপজেলা চত্বরে ঘুরতে আসা মানুষদের বইমুখী করে তুলতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমন উদোগ নিয়েছেন। যা পাঠকের মনে শুভ্রতা তৈরি করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সারমিনা সাত্তারের এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগকে ইতিবাচক বলছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
ইউএনও তার নিজস্ব পরিকল্পনায় উন্মুক্ত লাইব্রেরিগুলো বাস্তবায়ন করায় দারুণ খুশি স্থানীয় সব শ্রেণি-পেশার লোকজন। উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের সাঁকোয়া গ্রাম থেকে সেবা নিতে আসা পঞ্চাশ বছর বসয়ী আবুল মুনসুর আহমেদকে দেখা গেছে লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ছেন।
তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন,’ নিঃসন্দেহে এটি মহৎ একটি উদ্যোগ। আমি কৃষি অফিসের একটি কাজে উপজেলায় এসেছিলাম। মানুষের অনেক ভীড় থাকায় কাজটি করতে দেরি হবে। ভাবছিলাম বাহিরে চায়ের স্টল থেকে চা খেয়ে আসি। বের হওয়ার সময় চোখে পড়ে ছোট্ট একটি লাইব্রেরি। তাই বাহিরে সময় নষ্ট না করে যতক্ষণ সময় পেয়েছি বই পড়েছি। এতে আমার একদিকে যেমন অযথা সময় ও অর্থের অপচয় কমেছে অন্যদিকে জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাকির হোসেন নামে এক বইপ্রেমী বলেন, ‘এটা অসাধারণ উদ্যোগ। অযথা মোবাইলে সময় নষ্ট করা থেকে এই উদ্যোগ মানুষকে বইমুখী করে তুলবে।’ এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন,’ উপজেলা পরিষদে বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে প্রতিদিনেই অনেক মানুষ আসে। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি সেবা নিতে আসা অপেক্ষারত মানুষ গল্পগুজবে সময় পার করে। আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায় বাচ্চারা উপজেলা প্রাঙ্গণে এসে অলস সময় কাটায়। আবার অনেকেই তথ্য প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার ফলে মোবাইল হাতে নিয়ে ভার্চুয়াল জগতে ঝুঁকে থাকে। তাই আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে সেবা নিতে এসব মানুষগুলো যাতে অলস সময় না কাটায়। তাদেরকে বইয়ের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে উপজেলা পরিষদের তিনটি পয়েন্টে ছোট আকারে উন্মুক্ত লাইব্রেরি করে দিয়েছি।
এখান থেকে বই নিয়ে সবাই পড়বে,পড়া শেষে আবার সেখানেই রেখে দিবে। ইউএনও আরও বলেন,‘বই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। যারা প্রতিনিয়ত বই পড়ার মধ্য দিয়ে যায়, আমি মনে করি তাদের চিন্তা ও মননশীলতা অন্যদের থেকে আলাদা হয় এবং তারা জগৎটাকে তাদের খোলা চোখ দিয়ে দেখতে শেখে। যা তাদের জন্য সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হয়।