০১:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে নেতানিয়াহু

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ( ফাইল ছবি )

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলা দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো তিনি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার কঠোর নিরাপত্তা নীতির কারণে গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে এ সময় অভিযোগ করেছেন তিনি। বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ডানপন্থি লিকুদ পার্টির নেতা নেতানিয়াহু ইসরায়েলি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, গণমাধ্যম তার বিরুদ্ধে ‘বামপন্থী’ অবস্থান নিয়েছে এবং তাকে বছরের পর বছর ধরে হয়রানি করেছে, কারণ তার নীতিগুলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা চেষ্টার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

নেতানিয়াহু তিনটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত। ধনী বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ ও সংবাদমাধ্যমের মালিকদের থেকে অনুকূল সংবাদ পরিবেশনার বিনিময়ে নিয়ন্ত্রক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, যদি আমি ভালো প্রচারণাই চাইতাম, তবে দুই-রাষ্ট্র সমাধানে রাজি হলেই চলতো।

সাক্ষ্য দেওয়ার সময় নেতানিয়াহু বসেননি, বরং দাঁড়িয়ে কথা বলেন। দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি নিজেকে ইসরায়েলের নিরাপত্তার দৃঢ় রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেন এবং আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ বিরোধপূর্ণ মিডিয়ার বিরুদ্ধে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।

কোনও অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রথম ক্ষমতাসীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ৭৫ বছর বয়সী নেতানিয়াহু। তার মামলা লড়ার সময়ে ইসরায়েল গাজার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছে এবং সিরিয়াসহ আঞ্চলিক অস্থিরতায় নতুন হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে বিচারকরা রায় দেন যে নেতানিয়াহুকে সপ্তাহে তিন দিন সাক্ষ্য দিতে হবে। এর ফলে তাকে আদালতের কার্যক্রম ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

নেতানিয়াহু প্রায় চার ঘণ্টা সাক্ষ্য দিয়েছেন। বুধবার আবারও সাক্ষ্য দেবেন। এ সময় তার সামরিক সচিব তাকে দুইবার লিখিত বার্তা দেন,তার একটি বার্তায় বিরতির প্রয়োজনীয়তাটি বোঝা যায়। এতে তার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বৈত দায়িত্ব পালনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

তিনি আদালতে বলেছেন, সত্য কথা বলার জন্য আট বছর ধরে আমি এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু আমি একইসঙ্গে একজন প্রধানমন্ত্রীও, আমি সাতটি ফ্রন্টে যুদ্ধ পরিচালনা করছি। আমি মনে করি, দুই কাজ একসঙ্গে করা সম্ভব।

সাক্ষ্য শুরুর আগে তার আইনজীবী আমিত হাদাদ দাবি করেছেন, তদন্তে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। অপরাধের তদন্ত না করে বরং নেতানিয়াহুকে লক্ষ্যবস্তু করছিল কর্তৃপক্ষ বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

আদালতের বাইরে কিছু প্রতিবাদকারী জড়ো হন। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন সমর্থক। বাকিরা নেতানিয়াহুর প্রতি গাজায় হামাসের হাতে বন্দি থাকা ১০০ জন জিম্মির মুক্তির জন্য আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলা ও তারপর গাজা যুদ্ধ ইসরায়েলিদের মধ্যে শোক এবং হতাশার পরিবেশ তৈরি করেছিল। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় রাজনৈতিক ঐক্য ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।

গত মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজা সংঘর্ষে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই পদক্ষেপ নেতানিয়াহুর অভ্যন্তরীণ আইনি সমস্যাকে আরও জটিল করেছে।

ট্যাগ :
অধিক পঠিত

আটপাড়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ অনুষ্ঠিত

দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে নেতানিয়াহু

পোষ্টের সময় : ০২:১২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলা দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো তিনি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার কঠোর নিরাপত্তা নীতির কারণে গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে এ সময় অভিযোগ করেছেন তিনি। বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ডানপন্থি লিকুদ পার্টির নেতা নেতানিয়াহু ইসরায়েলি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, গণমাধ্যম তার বিরুদ্ধে ‘বামপন্থী’ অবস্থান নিয়েছে এবং তাকে বছরের পর বছর ধরে হয়রানি করেছে, কারণ তার নীতিগুলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা চেষ্টার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

নেতানিয়াহু তিনটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত। ধনী বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ ও সংবাদমাধ্যমের মালিকদের থেকে অনুকূল সংবাদ পরিবেশনার বিনিময়ে নিয়ন্ত্রক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, যদি আমি ভালো প্রচারণাই চাইতাম, তবে দুই-রাষ্ট্র সমাধানে রাজি হলেই চলতো।

সাক্ষ্য দেওয়ার সময় নেতানিয়াহু বসেননি, বরং দাঁড়িয়ে কথা বলেন। দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি নিজেকে ইসরায়েলের নিরাপত্তার দৃঢ় রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেন এবং আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ বিরোধপূর্ণ মিডিয়ার বিরুদ্ধে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।

কোনও অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রথম ক্ষমতাসীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ৭৫ বছর বয়সী নেতানিয়াহু। তার মামলা লড়ার সময়ে ইসরায়েল গাজার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছে এবং সিরিয়াসহ আঞ্চলিক অস্থিরতায় নতুন হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে বিচারকরা রায় দেন যে নেতানিয়াহুকে সপ্তাহে তিন দিন সাক্ষ্য দিতে হবে। এর ফলে তাকে আদালতের কার্যক্রম ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

নেতানিয়াহু প্রায় চার ঘণ্টা সাক্ষ্য দিয়েছেন। বুধবার আবারও সাক্ষ্য দেবেন। এ সময় তার সামরিক সচিব তাকে দুইবার লিখিত বার্তা দেন,তার একটি বার্তায় বিরতির প্রয়োজনীয়তাটি বোঝা যায়। এতে তার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বৈত দায়িত্ব পালনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

তিনি আদালতে বলেছেন, সত্য কথা বলার জন্য আট বছর ধরে আমি এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু আমি একইসঙ্গে একজন প্রধানমন্ত্রীও, আমি সাতটি ফ্রন্টে যুদ্ধ পরিচালনা করছি। আমি মনে করি, দুই কাজ একসঙ্গে করা সম্ভব।

সাক্ষ্য শুরুর আগে তার আইনজীবী আমিত হাদাদ দাবি করেছেন, তদন্তে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। অপরাধের তদন্ত না করে বরং নেতানিয়াহুকে লক্ষ্যবস্তু করছিল কর্তৃপক্ষ বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

আদালতের বাইরে কিছু প্রতিবাদকারী জড়ো হন। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন সমর্থক। বাকিরা নেতানিয়াহুর প্রতি গাজায় হামাসের হাতে বন্দি থাকা ১০০ জন জিম্মির মুক্তির জন্য আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলা ও তারপর গাজা যুদ্ধ ইসরায়েলিদের মধ্যে শোক এবং হতাশার পরিবেশ তৈরি করেছিল। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় রাজনৈতিক ঐক্য ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।

গত মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজা সংঘর্ষে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই পদক্ষেপ নেতানিয়াহুর অভ্যন্তরীণ আইনি সমস্যাকে আরও জটিল করেছে।