০৪:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালুকায় লেপ-তোষক বানাতে ধুনকরদের ব্যস্ততা

ভালুকায় লেপ-তোষক তৈরীতে ব্যস্ত ধুনকর। ছবি- ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রে।

হেমন্তের অন্তিম লগ্নে কুয়াশার চাদর গায়ে মাঠ ঘাট প্রান্তর গ্রাম শহড় অলি গলি প্রকৃতির রুপ বদলে আপাত মস্তক গরম কাপড় আর আগুনের চারপাশে হাত মেলে বসে থেকে শীত নিবারণের দৃশ্য বলে দিচ্ছে পৌষের মৌসুমী শীতের আগমনী বার্তা। ভেসে চলা কুয়াশায় তাপহীন অস্তগামী গোলাকার লাল সূর্যটা ক্রমশ বড় হয়ে দেখতে দেখতে তলিয়ে যায় আঁধারের পশ্চাতে। হেমন্তের মাজামাঝি হালকা শীত অনুভূত হলেও ২২ অগ্রাহায়ন হতে ভালুকায় শীত অনেকটাই ঝেকে বসেছে।

বিকেল হতেই ঘরে বাইরে হাট বাজার রাস্তাঘাটে সর্বত্রই ছোট বড় সকলকে গরম কাপড় পরিধান করে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ঋতু পরিবর্তনে চারিদিকে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। ফুটপাতের দোকান গুলিতে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষদের সাধ্যমত পরিবারের সকলের গরম কাপড় কেনার ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। অপরদিকে বিছানায় শীত নিবারণে স্বচ্ছল ও উচ্চ বিত্তরা ভীড় করছেন লেপ তোষকের দোকানে পছন্দসই মেট্রেস তৈরীতে।

 

বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুধা নিবারণে খাবার যেমন অতি জরুরী তেমনি শীত নিবারণে মানুষের সামর্থানুসারে শীত বস্ত্র ও রাতে গরম বিছানায় ঘুমানোর জন্য লেপ তোষক কম্বল কাঁথা ইত্যাদি যোগার করাও অত্যাবশ্যক। শীত নিবারণে বামনের গাই বেচে কাঁথা কেনা আদি পুরুষদের প্রবাদটি এখনও লোক মুখে শোনা যায়। আসন্ন শীত নিবারণে গ্রাম গঞ্জের মানুষ ভীড় করতে শুরু করছেন ধুনকরদের দোকানে আর এ সময় লেপ-তোষকে সুঁই ফুটাতে কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পূর্ব কাল হতেই শীতের ফসল আমন ধান ঘরে তোলে গৃহস্থ পরিবারের বিবাহযোগ্য ছেলে মেয়েদের বিয়ের আয়োজন করা গ্রামের মানুষের প্রথাগত লোকাচারের মধ্যে অন্যতম। বর কনে বিদায়ের সময় মেয়ের বাড়ী হতে লেপ-তোষক বালিশ সাথে না দিলে শশুর বাড়ীর লোকজনের খোটা শুনতে হয় নতুন বৌকে। তাছারা শুধু শীত কেন বিয়ের কনে বিদায়ের সময় নতুন লেপ তোশক সাথে দেয়া গ্রাম বাংলার অতি পুরানো রীতি রেওয়াজ হিসেবেই এখনও প্রচলিত।

সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভালুকা পৌর বাজার রোড,পশ্চিম বাজার, থানার মোড় সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ছোটবড় হাট বাজার যেমন বিরুনীয়া বাজার, সিডস্টোর বাজার, ডাকাতিয়া ও আঙ্গারগাড়া বাজার,উথুরা ও চামিয়াদী বাজার,ধলিয়া ও শান্তিগঞ্জ বাজার, ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড বাজার, মল্লিকবাড়ী ও কাচিনা বাজারে লেপ-তোষক বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। দোকানের সামনে বড় মাদুর কিংবা চাটাই পেতে তার উপর মাপের কাপর বিছিয়ে প্রয়োজন মত তুলা দিয়ে শুরু হয় সুঁই ফুটিয়ে সেলাইয়ের কাজ। এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে তৈরী হয়ে যায় একটি লেপ কিংবা তোষক। এ ভাবে একটার পর একটা অর্ডার করা লেপ-তোষক তৈরী করে ক্রেতাদের সরবরাহ করেন ধুনকররা। অনেকে খরচ কমাতে পুড়ানো লেপ তোষকের তুলা ঝেড়ে নতুন কাপড় দিয়ে লেপ তোষক তৈরী করে নিচ্ছেন।

 

ভালুকা পৌর এলাকার শহীদ নাজিম উদ্দীন রোডে মোস্তফা শাহীন বেডিং হাউজের সত্বাধিকারী ধুনকর সফিকুল ইসলাম জানান লেপ তোষক তৈরীর কাজ করছেন প্রায় ৩০ বছর যাবৎ। মৌসুম ছারা বছরের প্রায় প্রতি মাসেই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন লেপ-তোষক তৈরী করে। শীতের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে অনেকেই নতুন লেপ তোষকের অগ্রীম অর্ডার দিয়ে যায়। সারা বছরই টুকি টাকি লেপ-তোষক সেলাই করে থাকেন তবে শীত পরলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। তখন অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হয়। সাইজ অনুযায়ী প্রতিটি লেপ ও তোষক তৈরীতে তারা মুজরি পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। সেলাই কর্মীরাও সবাই একই নিয়মে মজুরি নিয়ে থাকেন। দিন শেষে একেক জনের ৮শ থেকে ১ হাজার টাকার মত রোজগার হয় তাদের। তা দিয়েই সংসার চালান তারা। তবে বর্তমানে বাজারে জিনিষ পত্রের দাম বেশী হওয়ায় সংসার খরচ চালাতে হিমসিম ক্ষেতে হয়। বড় ছেলে মোস্তফা বিএ পাশ করেছে মেঝো ছেলে শাহীন মাদ্রাসায় পড়ে মেয়ে সোয়া সপ্তম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। ৮ হাজার টাকা মাসে বাসা ভাড়া দিতে হয়। দোকান ভাড়া কর্মচারীর বেতন সংসার খরচ বাদ দিয়ে মাস শেষে হাতে কোন পয়সা থাকেনা। এই ব্যবসা করে কোন রকমে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন চালাচ্ছেন।

শীত মৌসুমে প্রতিদিন তার দোকানে প্রায় ৭-৮টি লেপ-তোষকের অর্ডার হয়ে থাকে। এছারা বিভিন্ন সাইজের তৈরী করা লেপ তোষক বালিশ কমবেশী বিক্রি হয় প্রতিদিন। অনেকে কম মূল্যে রেডিমেড লেপ তোষক কিনে নেন যার যার সাধ্য মত। তিনি আরো জানান শিমুল তুলা প্রতি কেজি ৫০০ থেকে সারে ৫০০ টাকা, কার্পাস তুলা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, গার্মেন্টস তৈরি কালো হুলু কালা তুলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, সাদা তুলা ৯০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাপড় মান অনুযায়ী প্রতি গজ ৫০ থেকে ৭০ টাকা। সব মিলিয়ে ভালো মানের একটি লেপ তৈরি করতে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মতো বর্তমান বাজার মূল্যে খরচ হয়। একই মানের একটি তোষকেও খরচ আসে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। লেপ কিনতে আশা ক্রেতা ধলিকুড়ি গ্রামের ইছাম উদ্দীন জানান ৪ হাত ৫ হাত সাইজের একটি লেপ ভাল কাপড় দিয়ে তিনি ২৮শ টাকায় তৈরী করেছেন। শীত শুরু হয়ে গেছে তাই লেপ তোষকের দোকানে ভীড় বেশি।

ট্যাগ :
অধিক পঠিত

ভালুকায় লেপ-তোষক বানাতে ধুনকরদের ব্যস্ততা

পোষ্টের সময় : ০৩:১৭:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

হেমন্তের অন্তিম লগ্নে কুয়াশার চাদর গায়ে মাঠ ঘাট প্রান্তর গ্রাম শহড় অলি গলি প্রকৃতির রুপ বদলে আপাত মস্তক গরম কাপড় আর আগুনের চারপাশে হাত মেলে বসে থেকে শীত নিবারণের দৃশ্য বলে দিচ্ছে পৌষের মৌসুমী শীতের আগমনী বার্তা। ভেসে চলা কুয়াশায় তাপহীন অস্তগামী গোলাকার লাল সূর্যটা ক্রমশ বড় হয়ে দেখতে দেখতে তলিয়ে যায় আঁধারের পশ্চাতে। হেমন্তের মাজামাঝি হালকা শীত অনুভূত হলেও ২২ অগ্রাহায়ন হতে ভালুকায় শীত অনেকটাই ঝেকে বসেছে।

বিকেল হতেই ঘরে বাইরে হাট বাজার রাস্তাঘাটে সর্বত্রই ছোট বড় সকলকে গরম কাপড় পরিধান করে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ঋতু পরিবর্তনে চারিদিকে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। ফুটপাতের দোকান গুলিতে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষদের সাধ্যমত পরিবারের সকলের গরম কাপড় কেনার ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। অপরদিকে বিছানায় শীত নিবারণে স্বচ্ছল ও উচ্চ বিত্তরা ভীড় করছেন লেপ তোষকের দোকানে পছন্দসই মেট্রেস তৈরীতে।

 

বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুধা নিবারণে খাবার যেমন অতি জরুরী তেমনি শীত নিবারণে মানুষের সামর্থানুসারে শীত বস্ত্র ও রাতে গরম বিছানায় ঘুমানোর জন্য লেপ তোষক কম্বল কাঁথা ইত্যাদি যোগার করাও অত্যাবশ্যক। শীত নিবারণে বামনের গাই বেচে কাঁথা কেনা আদি পুরুষদের প্রবাদটি এখনও লোক মুখে শোনা যায়। আসন্ন শীত নিবারণে গ্রাম গঞ্জের মানুষ ভীড় করতে শুরু করছেন ধুনকরদের দোকানে আর এ সময় লেপ-তোষকে সুঁই ফুটাতে কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পূর্ব কাল হতেই শীতের ফসল আমন ধান ঘরে তোলে গৃহস্থ পরিবারের বিবাহযোগ্য ছেলে মেয়েদের বিয়ের আয়োজন করা গ্রামের মানুষের প্রথাগত লোকাচারের মধ্যে অন্যতম। বর কনে বিদায়ের সময় মেয়ের বাড়ী হতে লেপ-তোষক বালিশ সাথে না দিলে শশুর বাড়ীর লোকজনের খোটা শুনতে হয় নতুন বৌকে। তাছারা শুধু শীত কেন বিয়ের কনে বিদায়ের সময় নতুন লেপ তোশক সাথে দেয়া গ্রাম বাংলার অতি পুরানো রীতি রেওয়াজ হিসেবেই এখনও প্রচলিত।

সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভালুকা পৌর বাজার রোড,পশ্চিম বাজার, থানার মোড় সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ছোটবড় হাট বাজার যেমন বিরুনীয়া বাজার, সিডস্টোর বাজার, ডাকাতিয়া ও আঙ্গারগাড়া বাজার,উথুরা ও চামিয়াদী বাজার,ধলিয়া ও শান্তিগঞ্জ বাজার, ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড বাজার, মল্লিকবাড়ী ও কাচিনা বাজারে লেপ-তোষক বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। দোকানের সামনে বড় মাদুর কিংবা চাটাই পেতে তার উপর মাপের কাপর বিছিয়ে প্রয়োজন মত তুলা দিয়ে শুরু হয় সুঁই ফুটিয়ে সেলাইয়ের কাজ। এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে তৈরী হয়ে যায় একটি লেপ কিংবা তোষক। এ ভাবে একটার পর একটা অর্ডার করা লেপ-তোষক তৈরী করে ক্রেতাদের সরবরাহ করেন ধুনকররা। অনেকে খরচ কমাতে পুড়ানো লেপ তোষকের তুলা ঝেড়ে নতুন কাপড় দিয়ে লেপ তোষক তৈরী করে নিচ্ছেন।

 

ভালুকা পৌর এলাকার শহীদ নাজিম উদ্দীন রোডে মোস্তফা শাহীন বেডিং হাউজের সত্বাধিকারী ধুনকর সফিকুল ইসলাম জানান লেপ তোষক তৈরীর কাজ করছেন প্রায় ৩০ বছর যাবৎ। মৌসুম ছারা বছরের প্রায় প্রতি মাসেই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন লেপ-তোষক তৈরী করে। শীতের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে অনেকেই নতুন লেপ তোষকের অগ্রীম অর্ডার দিয়ে যায়। সারা বছরই টুকি টাকি লেপ-তোষক সেলাই করে থাকেন তবে শীত পরলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। তখন অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হয়। সাইজ অনুযায়ী প্রতিটি লেপ ও তোষক তৈরীতে তারা মুজরি পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। সেলাই কর্মীরাও সবাই একই নিয়মে মজুরি নিয়ে থাকেন। দিন শেষে একেক জনের ৮শ থেকে ১ হাজার টাকার মত রোজগার হয় তাদের। তা দিয়েই সংসার চালান তারা। তবে বর্তমানে বাজারে জিনিষ পত্রের দাম বেশী হওয়ায় সংসার খরচ চালাতে হিমসিম ক্ষেতে হয়। বড় ছেলে মোস্তফা বিএ পাশ করেছে মেঝো ছেলে শাহীন মাদ্রাসায় পড়ে মেয়ে সোয়া সপ্তম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। ৮ হাজার টাকা মাসে বাসা ভাড়া দিতে হয়। দোকান ভাড়া কর্মচারীর বেতন সংসার খরচ বাদ দিয়ে মাস শেষে হাতে কোন পয়সা থাকেনা। এই ব্যবসা করে কোন রকমে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন চালাচ্ছেন।

শীত মৌসুমে প্রতিদিন তার দোকানে প্রায় ৭-৮টি লেপ-তোষকের অর্ডার হয়ে থাকে। এছারা বিভিন্ন সাইজের তৈরী করা লেপ তোষক বালিশ কমবেশী বিক্রি হয় প্রতিদিন। অনেকে কম মূল্যে রেডিমেড লেপ তোষক কিনে নেন যার যার সাধ্য মত। তিনি আরো জানান শিমুল তুলা প্রতি কেজি ৫০০ থেকে সারে ৫০০ টাকা, কার্পাস তুলা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, গার্মেন্টস তৈরি কালো হুলু কালা তুলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, সাদা তুলা ৯০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাপড় মান অনুযায়ী প্রতি গজ ৫০ থেকে ৭০ টাকা। সব মিলিয়ে ভালো মানের একটি লেপ তৈরি করতে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মতো বর্তমান বাজার মূল্যে খরচ হয়। একই মানের একটি তোষকেও খরচ আসে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। লেপ কিনতে আশা ক্রেতা ধলিকুড়ি গ্রামের ইছাম উদ্দীন জানান ৪ হাত ৫ হাত সাইজের একটি লেপ ভাল কাপড় দিয়ে তিনি ২৮শ টাকায় তৈরী করেছেন। শীত শুরু হয়ে গেছে তাই লেপ তোষকের দোকানে ভীড় বেশি।