ভূমিহীন ও গৃহহীনরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো বরাদ্দ পেয়েছেন মাত্র তিন বছর আগে। এরই মধ্যে ঘরগুলোর দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে প্লাস্টার। যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার শঙ্কায় দিন কাটছে আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামের দরগা পুকুর পাড়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে এমন অবস্থা দেখা গেছে। ২০২১ সালের আগষ্টে ১৩টি পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় উপজেলা প্রশাসন থেকে।
বর্তমানে অধিকাংশ ঘরেই ফাটল দেখা গেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফেটে যাওয়া এসব ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলোতে বসবাস করছেন ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘর নির্মাণের সময় নিম্মমানের উপকরণ ব্যবহার ও মানসম্মত ভাবে ঘরগুলো নির্মাণ না করার কারণে নির্মাণের প্রায় দুইবছর পরই অধিকাংশ ঘরগুলোর ভিতরে ও বাহিরে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতে এই ঘরগুলোতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের দরগা পুকুর পাড়ের নির্মাণ করা হয়েছে ১৩টি আশ্রয়ণের ঘর। এরমধ্যে ১১ আশ্রয়ণে ঘরে দেখা দিয়েছে ফাটল। কোন কোন ঘরের দেয়ালে ফাটল এমন ভাবে দেখা দিয়েছে যে সেই ঘরে বসবাস করাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ফাটলের কারণে প্রতিটি ঘরে অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে যে কোন সময়ে দুমড়ে মুচড়ে প্রাণহানীর মতো ঘটনা ঘটতে পারে। অনেকেই ফাটলগুলো নিজেরাই মেরামত করার চেস্টা করেছে। তবে দ্রুতই যদি ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলো মেরামত করা না হয় তাহলে ঘরগুলো ধ্বসে পড়বে বলে আশঙ্কায় দিন কাটছে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।
উপকারভোগী মালেছা বেগম (৬৮) বলেন, ঘর তৈরীর কিছুদিন পর আমার ঘর ভেঙে যায়। পরে অফিস থেকে পুনরায় ঘর করে দেওয়া হয়, তবে এখনো বাথরুমর স্ল্যাপ দেয়নি। পিআইও অফিসের লোকদের বলছিলাম তারা বলেছে বাজার থেকে কিনে নিতে পারেন না৷ বারবার অভিযোগ করার পরও তারা ঠিক করে দেয়নি।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা ফজিলা খাতুন (৫০) বলেন, আমাদের থাকার জায়গা ছিল না, ঘর ছিল না। আমার মতো ভূমিহীনদের একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছিলাম। কিন্তু যাদের ঘাড়ে দায়িত্ব ছিল তারা এমন নিম্নমানের কাজ করেছে বলেই তিন বছর পার হতে না হতেই ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই ঘরে কিভাবে থাকমু।
উপকারভোগী রমেলা রাণী (৮০) জানান, সরকারী ঘর পেয়ে খুব খুশি হইছি বাবা। কিন্তু ঘর তৈরিতে সিমেন্ট দিচে অল্প, বালু দিচে বেশি। নিম্নমানের কাজের জন্যই ঘরগুলোতে ফাটল ধরেছে বলে দাবি তাঁর।
অপর বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক (৭২) বলেন, আশ্রয়ণের প্রায় প্রতিটি ঘরের ভিতরে ও বাহিরে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটলের কথা বললে অফিসের লোকজন আজ নয় কাল কাল নয় পরশু বলে বলে দিন কাটাচ্ছে। আর আমরা বসবাস করছি হতাশা নিয়ে। ঝড় বৃষ্টি হলে ভয়ে ঘরে থাকার উপায় থাকে না। আমরা গরিব মানুষ সরকার যদি আবার ঘরগুলো ভালোভাবে মেরামত করে দিত তাহলে উপকার হত।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতি: দা:) আনোয়ার হোসেন শামিম বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। সরেজমিনে খুঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অচিরেই ঘরগুলো পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। এরপর তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।