জামালপুরের মেলান্দহে মাদারদহ নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরবর্তী ব্রীজ, বাড়িঘর ও ফসলি জমি। ভেকু মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন অবৈধ হলেও নির্ভয়ে বিরতিহীনভাবে বালু ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মযজ্ঞ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী মহল ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এভাবে বালু উত্তোলন ও মাটিকাটা চলতে থাকলে নদীর তীর ও কৃষি জমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের চিনিতোলা এলাকায় পুরাতন বাজার ব্রীজের ৩০০ মিটার উত্তরপাশে চর জেগেছে । সেখান থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। পরে ট্রাকে করে তা নেয়া হচ্ছে অন্যত্র।
এলাকাবাসীরা বলছেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ও বিএনপি নেতা ফরহাদ হোসেন মিন্টু ও বালু ব্যবসায়ী নুনু মিয়ার নেতৃত্বে এসব বালু তোলার পর ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ৮০-১০০ ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে। ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে বালু তোলায় ভাঙন ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে নদীর পশ্চিম তীরবর্তী ও পূর্ব তীরবর্তী ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি।
অভিযোগ করে তারা আরও বলেন, বালু ব্যবসায়ী ভেকুর মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলে না। প্রশাসনও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। সবার চোখের সামনেই দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে, প্রশাসন দ্রু বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
চিনিতোলা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, বালুবাহী ট্রাকের ধুলায় আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। দোকানের আসবাবপত্রে ধুলা পড়ে।রাস্তায় পানি দিতে বলছি। একদিন পানি দিছে আর দেয়না। কিছু বলতেও পারিনা।
আমেনা খাতুন নামে একজন বলেন, প্রতিবছরই চর জাগলে এই এলাকা থেকে বালু তোলা হয়। বালু তোলার কারণে প্রতি বছরই আমাদের নদী ভাঙনের কবলে পড়তে হয়। নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন বাড়ির কাছে চলে এসেছে। আমাদের দাবি বালু তোলা বন্ধ করা হোক।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নান্টু মিয়া বলেন , বালু তোলার জন্য প্রশাসনের কোন অনুমতি নেই। গতবছরও কাটছি।এবারও কাটতাছি।কয়েকজন মিলে কাটা হচ্ছে। আমি দেখাশোনা করি।আমারে কিছু খরচ দেয়।কুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহŸায়ক ফরহাদ হোসেন মিন্টু বলেন, ‘প্রতিবছরই ওখান থেকে বালু উঠে, এবারো জমির মালিকরা বালু বিক্রি করছে, আমরা কিনে সড়িয়ে দিচ্ছি। এতদিন আওয়ামীলীগ কাটছে, অনেকদিন পর এবার আমরা একটু গেছি।’
এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম আলমগীর হোসেন বলেন, অবৈধভাবে বালু তোলার কোন সুযোগ নেই। সরেজমিনে গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।