বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শর্করা ও মানুষের সুলভ বিকল্প সবজি শিমুল আলু ও অড়হর ডাল দিয়ে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকিরের নেতৃত্বে কৃষি অনুষদের এক কক্ষে ৫ জন উদ্যোক্তা ও ৫ জন কৃষক সহ মোট ১০ জনকে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন, বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শাহানারা বেগমসহ বিভাগের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এসময় অধ্যাপক ছোলায়মানের সহধর্মিণী রাকেয়া তৌফিকা নাজনীন রিন্ত মুখরোচক খাবার তৈরি করে সবাইকে পরিবেশন করেন। পরে উদ্যোক্তা ও কৃষকদের এসব খাবার তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অধ্যাপক ছোলায়মান বলেন, ‘অড়হর ও শিমুল আলু শর্করা ও প্রাণিজ আমিষের সুলভ বিকল্প হতে পারে। সেই লক্ষ্যেই আজকের এই প্রয়াস। শিমুল আলু ও অড়হর দিয়ে বিভিন্ন খাদ্য যেমন সিঙ্গারা, পুরি, রুটি, চিপস তৈরি করেছি। এমনকি শিমুল আলু দিয়ে মাংসও রান্না করা হয়েছে। অড়হরের রুটি আফ্রিকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়।’
চাষাবাদ নিয়ে ড. ছোলায়মান বলেন, ‘পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে শিমুল আলু ও অড়হর অভিযোজনে বেশ কার্যকর। দুটো ফসলই খরা সহনশীল। স্টার্চ ও প্রাণিজ আমিষের সুলভ বিকল্প বলে অনেকটা খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে সক্ষম। প্রচুর বায়োমাস (৩-৫ টন) প্রতি হেক্টরে জ্বালানী সমস্যার সমাধান হতে পারে। বেড়া ও সাথি ফসল হিসাবেও এটি কার্যকর। সারি থেকে সারি ১মি ও গাছ থেকে ১ মি দুরুত্বে গর্ত করে এপ্রিল হতে জুলাই মাসের মধ্যে এ বীজ বপন করতে হয়।’ শিমুল আলুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধান উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। এই চাপ কমাতে এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের এসব অপ্রচলিত খাদ্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। শিমুল আলুর উৎপাদন ধানের তুলনায় অনেক বেশি। আমরা প্রায় ২০ টন পর্যন্ত শিমুল আলু উৎপাদন করেছি।’
অড়হরের প্রসঙ্গে অধ্যাপক বলেন, ‘বাজারে প্রাণিজ আমিষের দাম অনেক বেশি। এক্ষেত্রে অড়হর হতে পারে একটি সাশ্রয়ী বিকল্প। এতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। পাশাপাশি এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে।’
ময়মনসিংহ সদরের কৃষি কর্মকর্তা ও উদ্যোক্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘মটরশুঁটির দিকে ঝোঁকার পরিবর্তে যদি প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একটি অড়হরের গাছ থাকে, তাহলে ৭-৮ মাসের জন্য ডালের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এর পাতা জৈব সার ও প্রাণী খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। অধ্যাপক ছোলায়মান স্যারকে ধন্যবাদ, তিনি এসব কেমনে রান্না করে খাওয়া যায় সেটি আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন।’
কৃষক শফিউল হক বলেন, ‘অড়হর দিয়ে তৈরি খাবার আমার খুব ভালো লেগেছে। বাসায় এগুলো আমরাও তৈরি করবো। আর শিমুল আলু সম্পর্কে আজই প্রথম জানলাম।’