০৮:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিল্লিতে মহাকুম্ভের ভিড়ে পদদলিত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু

 

ভারতের রাজধানী দিল্লির নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে ভয়াবহ ভিড়ের মধ্যে পড়ে তিন শিশু ও ১৪ জন মহিলাসহ অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন বহু যাত্রী। শনিবার রাত ১১টা নাগাদ শুরু হওয়া ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় প্রথমে চার জন মহিলা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হলেও, পরে আরও বহু মানুষের হতাহতের খবর সামনে আসে। দিল্লির এলএনজেপি হাসপাতালের প্রধান জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এলএনজেপি হাসপাতালে ১০ জন নারী, ৩ শিশু এবং ২ জন পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। লেডি হার্ডিং হাসপাতালে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

নয়জন নিহত ব্যক্তি বিহারের, আটজন দিল্লির, এবং একজন হরিয়ানার বাসিন্দা ছিলেন। রেল কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে যাতে তারা দিল্লির বাইরে থাকা মৃতদের পরিবারকে নিজ নিজ শহরে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি, গুরুতর আহতদের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার রুপি টাকা এবং সামান্য আহতদের জন্য ১ লাখ রুপি আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে।

এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে চারটি দমকল ইঞ্জিনও পাঠানো হয়েছে। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

জানা গেছে, নিউ দিল্লি রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১৪ ও ১৫ তে গত রাত ৮টা নাগাদ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যখন যাত্রীরা প্রয়াগরাজগামী ট্রেন ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে যে, একটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সময় বিশাল ভিড় জমে যায়। কর্মকর্তারা জানান, ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয় এবং অনেক যাত্রী বুঝতে পারেন যে সবাই ট্রেনে উঠতে পারবে না, তখনই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে অন্তত দুই ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় দেখা যায় এবং অন্যরা তাদের সজাগ করার চেষ্টা করছিলেন। ভিড়ের চাপে এসকেলেটরের কাছে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও রিপোর্ট করা হয়েছে।

যদিও প্রাথমিকভাবে রেল কর্তৃপক্ষ কোনও মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি, দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং প্রাণহানির বিষয়ে কথা বলেন। তারা ঘটনাটিকে পদদলন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভি কে সাক্সেনা লিখেছেন, ‘নিউ দিল্লি রেলস্টেশনে বিশৃঙ্খলা ও পদদলনের কারণে প্রাণহানি ও আহত হওয়ার দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।’

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যখন প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১৪-তে ছিল, তখন সেখানে অনেক লোক উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতা সেনানি এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানী (যা দুটিই প্রয়াগরাজের উপর দিয়ে যায়) বিলম্বিত ছিল এবং এই ট্রেনগুলোর যাত্রীরাও প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১২, ১৩ এবং ১৪-তে উপস্থিত ছিলেন।

মহাকুম্ভ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেনগুলোতে ক্রমশ বাড়তে থাকা ভিড় বাড়ছে। কারণ প্রতি ১২ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত এই উৎসবটি ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে চলেছে।

দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অতিশি নিউ দিল্লি রেলস্টেশনের বিশৃঙ্খলা নিয়ে কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এর আগে, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব ভক্তদের ভিড় কমানোর জন্য মহাকুম্ভের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এখনও অনেক মানুষ মহাকুম্ভে যেতে চান, কিন্তু পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত মহাকুম্ভের সময়সীমা বাড়ানো। তিনি উল্লেখ করেন, মহাকুম্ভ আগেরবার ৭৫ দিন ধরে চলেছিল, কিন্তু এবার তা দ্রুত শেষ হচ্ছে।

ট্যাগ :
অধিক পঠিত

দিল্লিতে মহাকুম্ভের ভিড়ে পদদলিত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু

পোষ্টের সময় : ০৩:২০:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

ভারতের রাজধানী দিল্লির নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে ভয়াবহ ভিড়ের মধ্যে পড়ে তিন শিশু ও ১৪ জন মহিলাসহ অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন বহু যাত্রী। শনিবার রাত ১১টা নাগাদ শুরু হওয়া ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় প্রথমে চার জন মহিলা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হলেও, পরে আরও বহু মানুষের হতাহতের খবর সামনে আসে। দিল্লির এলএনজেপি হাসপাতালের প্রধান জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এলএনজেপি হাসপাতালে ১০ জন নারী, ৩ শিশু এবং ২ জন পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। লেডি হার্ডিং হাসপাতালে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

নয়জন নিহত ব্যক্তি বিহারের, আটজন দিল্লির, এবং একজন হরিয়ানার বাসিন্দা ছিলেন। রেল কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে যাতে তারা দিল্লির বাইরে থাকা মৃতদের পরিবারকে নিজ নিজ শহরে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি, গুরুতর আহতদের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার রুপি টাকা এবং সামান্য আহতদের জন্য ১ লাখ রুপি আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে।

এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে চারটি দমকল ইঞ্জিনও পাঠানো হয়েছে। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

জানা গেছে, নিউ দিল্লি রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১৪ ও ১৫ তে গত রাত ৮টা নাগাদ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যখন যাত্রীরা প্রয়াগরাজগামী ট্রেন ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে যে, একটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সময় বিশাল ভিড় জমে যায়। কর্মকর্তারা জানান, ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয় এবং অনেক যাত্রী বুঝতে পারেন যে সবাই ট্রেনে উঠতে পারবে না, তখনই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে অন্তত দুই ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় দেখা যায় এবং অন্যরা তাদের সজাগ করার চেষ্টা করছিলেন। ভিড়ের চাপে এসকেলেটরের কাছে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও রিপোর্ট করা হয়েছে।

যদিও প্রাথমিকভাবে রেল কর্তৃপক্ষ কোনও মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি, দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং প্রাণহানির বিষয়ে কথা বলেন। তারা ঘটনাটিকে পদদলন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভি কে সাক্সেনা লিখেছেন, ‘নিউ দিল্লি রেলস্টেশনে বিশৃঙ্খলা ও পদদলনের কারণে প্রাণহানি ও আহত হওয়ার দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।’

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যখন প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১৪-তে ছিল, তখন সেখানে অনেক লোক উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতা সেনানি এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানী (যা দুটিই প্রয়াগরাজের উপর দিয়ে যায়) বিলম্বিত ছিল এবং এই ট্রেনগুলোর যাত্রীরাও প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১২, ১৩ এবং ১৪-তে উপস্থিত ছিলেন।

মহাকুম্ভ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেনগুলোতে ক্রমশ বাড়তে থাকা ভিড় বাড়ছে। কারণ প্রতি ১২ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত এই উৎসবটি ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে চলেছে।

দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অতিশি নিউ দিল্লি রেলস্টেশনের বিশৃঙ্খলা নিয়ে কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এর আগে, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব ভক্তদের ভিড় কমানোর জন্য মহাকুম্ভের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এখনও অনেক মানুষ মহাকুম্ভে যেতে চান, কিন্তু পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত মহাকুম্ভের সময়সীমা বাড়ানো। তিনি উল্লেখ করেন, মহাকুম্ভ আগেরবার ৭৫ দিন ধরে চলেছিল, কিন্তু এবার তা দ্রুত শেষ হচ্ছে।