ভাঁজপত্র হলো সাহিত্যের আঁতুরঘর। নতুন সাহিত্যের প্রথম জন্ম হয় এখানেই। বিশাল একটা বৃক্ষ যেমন দুই পাতার বীজপত্র থেকে প্রথম যাত্রা শুরু করে, তেমনই সাহিত্যের মতো ব্যাপক একটা জগত শুরু হয় তিন পাতার ভাঁজপত্র থেকে। সাহিত্যের সুরভিত জগতে যারা প্রথম পদার্পণ করে, প্রথম সন্ধান পায় একটা নতুন স্বর্গীয় সম্ভারের এবং এর সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেয়ার একটা রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়, তখনই তার প্রয়োজন পড়ে এমন একটা আশ্রয়ের,যেখানে সে তার নিজের সৃষ্টিশীলতাকে খুব সহজেই তুলে ধরতে পারে। এমনই একটা আশ্রয় হলো ভাঁজপত্র। এই রকম ভাঁজপত্রের সাথে আমরা অনেকেই কিশোর বা তরুণ বেলায় কম বেশি জড়িত ছিলাম।
কেউ “লেখক কাম সংগ্রাহক” হিসাবে এবং কেউ “সম্পাদক কাম লেখক” হিসাবে। এনালগ যুগে যখন ফেসবুক ছিলো না, ইউটিউব ছিলো না, জাতীয় পত্রিকার সাহিত্য পাতায় এক টুকরো জায়গা পাওয়ার সাধ্য বা সুযোগ ছিলো খুবই সীমিত, তখন নিজের সৃষ্টিকে আলো বাতাসে দৃশ্যমান করার একমাত্র উপায় ছিলো ভাঁজপত্র। কিশোর বা তরুণরা, ক্ষেত্রবিশেষে যুবকরা নিজেদের হাতখরচের পয়সা জমিয়ে ভাঁজপত্র প্রকাশ করার সাহস দেখাতো। এই ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়তো একজন অতি উৎসাহী এবং নিজের পকেট খালি করার ক্ষমতাসম্পন্ন নবীন কবিকে, যার হাতে জন্ম নিবে একটা নতুন ভাঁজপত্র। নব্বই দশকো এমনই একজন খাঁটি দুঃসাহসিক তরুণ ছিলেন আবদুর রফিক মজিদ। আমাদের বর্তমানের সাংবাদিক ও কবি মজিদ ভাই। তিনি সেই নব্বইয়ের দশক তথা তার কলেজ জীবন থেকে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এই ভাঁজপত্র নিয়ে। দীর্ঘ চৌত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর যাবত তার এই পথচলায় তিনি অনেক নতুন কবিকে খুঁজে বের করেছেন এবং নিজেও লেখালেখির জগতে হয়েছেন সমৃদ্ধ। সাধারণত ভাঁজপত্রের গ্রষ্টাকে আমরা চিনি ধূমকেতু হিসেবে।হঠাৎ উদয় হয়। দুই এক সংখ্যা বের করে।তারপর ডুবে যায়। আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
একটু বিরতি দিয়ে নতুন স্থানে নতুন আঙ্গিকে নতুন উৎসাহ নিয়ে নতুন ব্যক্তির হাত ধরে আবার উদয় হয় সে। কিন্তু রফিক মজিদ হলো এর মধ্যে ব্যতিক্রম। ভাঁজপত্রের জগতে তিনি হলেন মধ্য গগনের সূর্যের মতো পূর্ণ ত্যাজে দেবীপ্যমান। তিনি একটানা পঁয়ত্রিশ বছর যাবত ভাঁজপত্র প্রকাশ করে আসছেন। রাজনৈতিক প্রতিকূলতা বা স্বাস্থ্যগত বিড়ম্বনা ছাড়া তিনি কখনো এই কাজ থেকে বিরত হন নি।
ভাঁজপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে রফিক মজিদ ভাই একজন দৃঢ়প্রত্যয়ী অকুতোভয় সৈনিক। নির্ভাবনায় এবং নিরলস ভাবে তিনি ভাঁজপত্র সম্পাদনা এবং প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন যুগের পর যুগ। আমাদের শেরপুর জেলায় দীর্ঘদিন ধরে ভাঁজপত্রের সাথে যোগসূত্র অবিচ্ছিন্ন রাখা একমাত্র ব্যক্তি হলেন আমাদের মজিদ ভাই। আব্দুর রফিক মজিদ একাধারে একজন সুযোগ্য সংগঠক, মেধাবী সাংবাদিক, কবি, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক।
গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে তিনি দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন এবং শেরপুর জেলার সাহিত্যকে একটা মানসম্মত পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য নিবিড়ভাবে শ্রম দিচ্ছেন। প্রিয়ভাজন রফিক মজিদ ১৯৭১ সনের ২ এপ্রিল শেরপুর শহরের নয়ানীবাজার মহল্লায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৭ সনে এসএসসি, ১৯৮৯ সনে এইচএসসি এবং ১৯৯১ সনে শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
স্কুল জীবন থেকেই তিনি লেখালেখি করে আসছেন। দেশের বিভিন্ন দৈনিক এবং সাপ্তাহিকে তার লেখা ছড়া, কবিতা, গল্প, ফিচার এবং ভ্রমণবিষয়ক লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।
এই পর্যন্ত তার কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে কাব্যগ্রন্থ ‘অদৃশ্য অনুভূতি’, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ভ্রমণকাহিনী ‘মেঘালয়ে ফিরে দেখা ৭১’ এবং গল্পগ্রন্থ ‘অভিমানী কন্যা’সহ আরো প্রায় ডজনখানিক যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যচর্চা চলমান রেখে তিনি সাংবাদিকতার জগতেও বিচরণ করছেন।
বর্তমানে তিনি দৈনিক শেয়ার বিজ, সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘আজকের আরবান’ পত্রিকার সাথেও জড়িত আছেন।
তাছাড়া তিনি শেরপুর প্রেসক্লাবের কার্যকরি সভাপতি এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘শেরপুরকণ্ঠ’ এবং ই-ম্যাগাজিন ‘নন্দিত শেরপুর’ এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শেরপুর জেলার ভাঁজপত্র জগতের মুকুটহীন সম্রাট, প্রাণচাঞ্চল্যের এক বলিষ্ঠ উদাহরণ, মিষ্টভাষী রফিক মজিদ ভাই আমার বিবেচনায় একজন চির তরুণ। একজন চির নবীন।
আমরা শেরপুরবাসী তার জীবনের সফলতা ও উন্নতি কামনা করি।
লেখক- ছরাকার ও উপন্যাসিক, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা(অব), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।