ইলিয়াস আহমেদ :
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষি এবং মৎস্যখাতে।
এই দুই খাতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয় বলছেন তারা। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খামারীদের সহযোগিতার লক্ষ্যে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিরুপম করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সম্প্রতি বন্যায় তিন উপজেলার ৮৯ হাজার ৫৫০জন কৃষকের ৩১ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ক্ষতি হয়েছে ৩১৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
এরমধ্যে ধোবাউড়া আমন ধান নষ্ট হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমির, আর্থিক ক্ষতির পরিমান ১৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। হালুয়াঘাটে আমন নষ্ট হয়েছে ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির, আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি টাকা। ফুলপুরে আমন ধান নষ্ট হয়েছে ৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমির, আর্থিক ক্ষতির পরিমান প্রায় ৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, তিন উপজেলার ২৬ ইউনিয়নে ১৪ হাজার ৯৪৬টি পুকুরের ৪ হাজার ৪৬৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমান ৭৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২ কোটি ১২ লাখ মাছের পোনা ভেসে গেছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমান ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। এতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৮৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে ধোবাউড়ায় বানের পানিতে ৪ হাজার ২৯৬টি পুকুরের ২ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে, যার আর্থিক মূল্য ৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। হালুয়াঘাটে বন্যার পানিতে ৬ হাজার ১৫০টি পুকুরের ১ হাজার ১২০ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে, যা আর্থিক ক্ষতির পরিমান ২২ কোটি টাকা। ফুলপুরে সাড়ে ৪ হাজার পুকুরের ১২ শ মেট্রিক টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে, এতে ক্ষতি হয়েছে ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সম্প্রতি বন্যায় তলিয়ে গেছে ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের ডৌমঘাটা গ্রামের কৃষক কবির সারোয়ার সুজনের ৪০ একর ফিসারীর মাছ, দেড়শ একর ফসলের ধান। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
কৃষক কবির সারোয়ার সুজন বলেন, ১৯৮৭ সালের পরে এমন বন্যা এই এলাকার মানুষ কখনো দেখেনি। ৪০ বছর ধরে মাছ চাষ করে আসছি, সেই সঙ্গে ধান। কখনো ভাবতে পারিনি এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। সবকিছু পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দুইদিন পর স্বাভাবিক হয়েছি। সরকার সহযোগিতা না করলে ঘুরে দাঁড়ানো কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন বলেন, ২০ কাঠা জমিতে আমন ধান রোপন করেছিলাম। প্রতি কাঠায় ৬শ করে টাকা খরচ হয়েছে। আর একমাস পরেই ধান পাকা ধরত। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে। ফসল এখনো কোমর পানির মধ্যে। খেতের আয় দিয়েই ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা চলতো। এখন কি করব ভেবে পাচ্ছি না।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার কথা জানিয়ে ফুলপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কামরুল হাসান কামু বলেন, কৃষকদের পূনর্বাসনের লক্ষে এলাকার বড় বড় বাজারে জমায়েত করে কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া এসব ফসলী জমিতে শরিষা, ভ‚ট্টাসহ অন্যান্য ফসল চাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। ফসলের বীজ বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হবে।
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. নাসরিন আক্তার বানু বলেন, সম্প্রতি বন্যায় ময়মনসিংহে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের সহযোগিতার লক্ষে পরামর্শের পাশাপাশি সহযোগিতা চেয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো হবে।
ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, চলমান বন্যায় জেলায় প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ণয় করেছি। বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সহযোগিতা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে।