ময়মনসিংহ ০৩:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পশ্চিমারা ‘শিয়া-সুন্নি বিভেদ’ জিইয়ে রাখে যে কারণে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

মধ্যপ্রাচ্যে আরব-ইসরায়েল সংঘাতের চেয়েও বেশি প্রভাবশালী সংঘাত হিসেবে পরিচিত শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব। সুন্নি অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে ইরান, ইরাক, লেবানন ও ইয়েমেনে শিয়া মুসলিমরা প্রভাবশালী বলে পরিচিতি। ফলে অঞ্চলটিতে নিজেদের স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে সুন্নিদের অবশ্যই শিয়াদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।

শিয়াদের অবশ্যই সুন্নিদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে এমন মন্ত্র ছড়াচ্ছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। লন্ডনভিত্তিক সংবামাধ্যম দ্য মিডল ইস্ট আইয়ের প্রকাশিত এক মতামতে এমনটা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম লিবারেল আর্টস কলেজ জয়তুনা কলেজের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং ইসলামিক আইন ও ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হাতেম বাজিয়ান।

মতামতে বলা হয়, পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের মিত্ররা মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি-শিয়া বিভেদকে অতিরঞ্জিত করে দেখায় এবং পরস্পরকে অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এই ধারণা পশ্চিমা রাজনৈতিক নেতারা, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া এবং বিশেষভাবে নির্বাচিত ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা মৃত্যু ও ধ্বংসের কারবারি হিসেবে কাজ করছে।

অধ্যাপক বাজিয়ান মনে করেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে সুন্নি-শিয়া বিভেদ বাড়িয়ে তুলে তাদের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ, জায়নবাদী সহিংসতা এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি হস্তক্ষেপকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করে। এখানে সংঘাত যাতে চলতেই থাকে, সে জন্য অনেক শক্তি ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক কাজ করে যাচ্ছে।

বাজিয়ানের মতে, আজকের মধ্যপ্রাচ্যে যে আঞ্চলিক সংঘাত চলছে, তার মূল কারণ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল মজুত। এই তেল ও গ্যাস বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উনিশ শতকে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বাজার দখলের জন্য ব্রিটেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ইতালি ও বেলজিয়াম তাদের সামরিক, অর্থনৈতিক ও জ্ঞানতাত্তিক প্রভাব খাটিয়েছিল।

এই গবেষক জানান, আরবের স্থানীয় মানুষের মতাদর্শগত বিভাজন আগে থেকেই ছিল। কিন্তু ঔপনিবেশিকতা এবং ইউরোপের লোভ সেই বিভাজনকে আরও জাগিয়ে তুলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ফলে সমাজগুলো নিজেদের প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো খুব সস্তায় অধিকতর প্রাকৃতিক সম্পদ ও বাজার দখল করতে পেরেছে।

মতামতে বলা হয়, পশ্চিমা ঔপনিবেশিক প্রকল্পগুলো জায়নবাদীদের সাহায্য করেছে এবং আরব অঞ্চলে আধুনিক জাতিরাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রেখেছে। ঔপনিবেশিক শাসন চলে গেলেও, পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক, শিক্ষা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় কাঠামো এখনো রয়ে গেছে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে ব্রিটিশ ও ফরাসিরা তাদের ঔপনিবেশিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সুন্নি-শিয়া বিভাজনকে বাড়িয়ে তুলেছিল। মূলত, তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল প্রাকৃতিক সম্পদ ও বাণিজ্যপথ নিয়ন্ত্রণ করা।

ট্যাগ :

পশ্চিমারা ‘শিয়া-সুন্নি বিভেদ’ জিইয়ে রাখে যে কারণে

পোষ্টের সময় : ০২:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

মধ্যপ্রাচ্যে আরব-ইসরায়েল সংঘাতের চেয়েও বেশি প্রভাবশালী সংঘাত হিসেবে পরিচিত শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব। সুন্নি অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে ইরান, ইরাক, লেবানন ও ইয়েমেনে শিয়া মুসলিমরা প্রভাবশালী বলে পরিচিতি। ফলে অঞ্চলটিতে নিজেদের স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে সুন্নিদের অবশ্যই শিয়াদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।

শিয়াদের অবশ্যই সুন্নিদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে এমন মন্ত্র ছড়াচ্ছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। লন্ডনভিত্তিক সংবামাধ্যম দ্য মিডল ইস্ট আইয়ের প্রকাশিত এক মতামতে এমনটা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম লিবারেল আর্টস কলেজ জয়তুনা কলেজের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং ইসলামিক আইন ও ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হাতেম বাজিয়ান।

মতামতে বলা হয়, পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের মিত্ররা মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি-শিয়া বিভেদকে অতিরঞ্জিত করে দেখায় এবং পরস্পরকে অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এই ধারণা পশ্চিমা রাজনৈতিক নেতারা, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া এবং বিশেষভাবে নির্বাচিত ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা মৃত্যু ও ধ্বংসের কারবারি হিসেবে কাজ করছে।

অধ্যাপক বাজিয়ান মনে করেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে সুন্নি-শিয়া বিভেদ বাড়িয়ে তুলে তাদের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ, জায়নবাদী সহিংসতা এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি হস্তক্ষেপকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করে। এখানে সংঘাত যাতে চলতেই থাকে, সে জন্য অনেক শক্তি ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক কাজ করে যাচ্ছে।

বাজিয়ানের মতে, আজকের মধ্যপ্রাচ্যে যে আঞ্চলিক সংঘাত চলছে, তার মূল কারণ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল মজুত। এই তেল ও গ্যাস বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উনিশ শতকে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বাজার দখলের জন্য ব্রিটেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ইতালি ও বেলজিয়াম তাদের সামরিক, অর্থনৈতিক ও জ্ঞানতাত্তিক প্রভাব খাটিয়েছিল।

এই গবেষক জানান, আরবের স্থানীয় মানুষের মতাদর্শগত বিভাজন আগে থেকেই ছিল। কিন্তু ঔপনিবেশিকতা এবং ইউরোপের লোভ সেই বিভাজনকে আরও জাগিয়ে তুলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ফলে সমাজগুলো নিজেদের প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো খুব সস্তায় অধিকতর প্রাকৃতিক সম্পদ ও বাজার দখল করতে পেরেছে।

মতামতে বলা হয়, পশ্চিমা ঔপনিবেশিক প্রকল্পগুলো জায়নবাদীদের সাহায্য করেছে এবং আরব অঞ্চলে আধুনিক জাতিরাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রেখেছে। ঔপনিবেশিক শাসন চলে গেলেও, পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক, শিক্ষা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় কাঠামো এখনো রয়ে গেছে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে ব্রিটিশ ও ফরাসিরা তাদের ঔপনিবেশিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সুন্নি-শিয়া বিভাজনকে বাড়িয়ে তুলেছিল। মূলত, তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল প্রাকৃতিক সম্পদ ও বাণিজ্যপথ নিয়ন্ত্রণ করা।