বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের একাংশের শীর্ষ নেতা ভারতীয় মাওলানা সাদ কান্দলভীকে আসতে অনুমতি দেওয়ার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন সাদপন্থীরা। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম।
তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের আহলে শুরা সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন। স্মারকলিপিতে লেখা হয়, ‘বিপুল ত্যাগ-তিতীক্ষা ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকারের সফলতার মাধ্যমে সব জুলুম-অত্যাচার দূর হয়ে রাষ্ট্রের সব স্তরে যাতে সুবিচার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হয়, এজন্য আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে অন্তর থেকে দোয়া করি।’
দাওয়াত ও তাবলিগের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উল্লেখ করে স্বারকলিপিতে বলা হয়, আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে ভারতের দিল্লিস্থ নিজামুদ্দীন বাংলাওয়ালী মসজিদ হতে হজরত মাওলানা ইলিয়াছ (রহ.) রসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবার (রা.) তরিকার অনুসরণে এ মেহনত শুরু করেন। বর্তমানেও উক্ত নিজামুদ্দীন বিশ্ব মার্কাজ মসজিদ (সদর দফতর) হতে বিশ্ব আমির হজরত মাওলানা সাদ কান্দলভীর নেতৃত্বে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত সমগ্র পৃথিবীতে পরিচালিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত প্রচার-প্রসার লাভ করছে আলহামদুলিল্লাহ।
বিশ্ব তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ একজন বিজ্ঞ আলেম হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে কোরআন ও হাদিসের আলোকে মূল্যবান বয়ান রাখতেন উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, এর আগে তিনি প্রতিবছর ইজতেমায় শরিক হতেন এবং ইজতেমার মূল বয়ানসহ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করতেন। ২০১৮ সালের পর থেকে তাকে কোনোরূপ যৌক্তিক কারণ ছাড়া বাংলাদেশে আসতে ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ব আমির এলে আরও বিপুল সংখ্যক বিদেশি মেহমান বাংলাদেশে আসতেন। এতে বিদেশে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধিসহ অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, হজরত মাওলানা সাদ বাধাহীনভাবে সমগ্র বিশ্বে তাবলিগের কাজে সফর করছেন। অতি সম্প্রতি তিনি ইজতেমার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা, ইথিওপিয়া, মালয়েশিয়া, মরোক্ক, ইংল্যান্ড, সুদান, নেপাল সফর করেছেন। এ ছাড়া তিনি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বড় বড় ইজতেমায় শরিক হচ্ছেন।
সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম বলেন, অন্যদিকে মাওলানা সাদের মতো একজন বিশ্ব বরেণ্য আলেম বাংলাদেশে কেন আসতে পারেন না, যখন বিদেশিরা এ প্রশ্ন করেন আমরা কোনও সদুত্তর দিতে পারি না। আর বাংলাদেশের লাখ লাখ তাবলিগের সাথী বিগত ৬ বছর ধরে উনার মূল্যবান বয়ান শুনতে না পারার কারণে অত্যন্ত ব্যথিত-মর্মাহত। তাই বিশ্ব আমির হজরত মাওলানা সাদ কান্দলভীর বাংলাদেশে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমরা আপনার কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে হাজার হাজার মুসল্লী অবস্থান নিয়ে মাওলানা সাদকে ইজতেমায় আসতে দেয়ার দাবিতে কাকরাইল মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করছেন সাদপন্থীরা। এসময় তারা মাওলানা সাদকে আনার জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় মাওলানা সাদকে ঢাকায় আসার অনুমতি না দেওয়ায় সকালে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যেতে চাইলে পুলিশের বাঁধার মুখে পড়ে সড়কে অবস্থান নেন তারা। এ কারণে সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরে বেলা ১১টার পর মাওলানা সাদের ইজতেমায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনূস বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে অবস্থান ছেড়েছেন সাদপন্থী তাবলীগ জামাতের সদস্যরা।
জানা যায়, আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব এবং ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদের উপস্থিতি চান তার সমর্থকরা।