০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেভাবে হজ পালন করেছেন নবী-রাসুলরা

 

পবিত্র হজ নবী-রাসুলদের স্মৃতিবিজড়িত ইবাদত। নানা আনুষ্ঠানিকতায় নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগেও হজের প্রচলিত ছিল। আইয়ামে জাহিলিয়াতে নগ্ন তাওয়াফসহ মক্কাবাসীরা কাবার চারপাশে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন এবং সেগুলোর উপাসনা, হজের মূলনীতির বিকৃতি ঘটায়।

 

ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক, হায়তামি ও ইবনে কাসিরসহ বেশির ভাগ বিশ্লেষকের মতে, হজরত হুদ (আ.) ও হজরত সালেহ (আ.) ছাড়া প্রায় সব নবী-রাসুল হজ করেছেন। -সিরাতে ইবনে ইসহাক, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া

 

হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) জান্নাত থেকে পৃথিবীতে আসার পর, অবশেষে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হন। ঘটনাটির কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আদমের বংশধর প্রতিবছর আরাফাতের প্রান্তরে কান্নাকাটির মাধ্যমে মহাপ্রভুর দরবারে উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।

ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত, হজরত আদম (আ.) বেহেশত থেকে ভারতবর্ষে অবতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি ৪০ বার পদব্রজে হজ করেন।

 

হজরত ইবরাহিম (আ.) ও বিবি হাজেরা এবং তাদের সন্তান হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর সাফা-মারওয়া সাঈ, মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ এবং কোরবানি আদায়ের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য হজের প্রচলন করেন।

হজ সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনা পাওয়া যায় বিভিন্ন সুরায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহিমকে সেই ঘরের (বায়তুল্লাহ) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম…আর মানুষের নিকট হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূরপথ পাড়ি দিয়ে। …তারপর তারা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, তাদের মানতসমূহ পূরণ করে এবং প্রাচীন ঘরের (বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ করে।’ -সুরা হজ: ২৬-২৯

 

হজরত মুসা (আ.) এবং ৭০ জন নবীর হজ নিয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রাওহা উপত্যকা দিয়ে ৭০ জন নবী পশমি কাপড় পরে হজ করতে গিয়েছিলেন এবং মসজিদে খায়ফে তারা নামাজ আদায় করেছিলেন। -বায়হাকি, মুসতাদরাকে হাকেম

হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, মসজিদে খায়ফে ৭০ জন নবী নামাজ আদায় করেছেন। হজরত মুসা (আ.) তাদের অন্যতম…তার গায়ে দুটি পশমি চাদর জড়ানো। তিনি দুই গুচ্ছ লাগামবিশিষ্ট উটের ওপর ইহরাম বেঁধে বসে আছেন। -তাবরানি

 

বায়তুল মোকাদ্দাস নির্মাণের পর হজরত সোলায়মান (আ.) মক্কায় হজব্রত পালন করেন বলে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। মক্কায় আবস্থানকালে তিনি প্রতিদিন পাঁচ হাজার পাঁচ হাজার করে উট, গরু, ছাগল কোরবানি করেন।

 

হজরত ঈসা (আ.)-এর হজের কথাও হাদিসে পাওয়া যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! মরিয়মপুত্র ঈসা অবশ্যই রাওহা উপত্যকায় হজ অথবা উমরা অথবা উভয়ের তালবিয়া পাঠ করবেন।’ -সহিহ মুসলিম

 

 

নবী মুহাম্মদ (সা.) চারবার উমরা, হিজরতের পর একবার ফরজ হজ করেছেন। হজরত কাতাদা (রহ.) বলেন, আমি হজরত আনাস বিন মালিক (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কতবার হজ করেছেন? তিনি বলেন, একবার। আর উমরা করেছেন চারবার। জিলকদ মাসে একবার। হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় একবার। হজের সঙ্গে একবার। আর একবার যখন তিনি হুনাইন জেহাদের গনিমতের মাল বণ্টন করেছেন।’ -সুনানে তিরমিজি

 

কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, হিজরতের আগে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দুইবার হজ করেছেন। যেমনটি তিরমিজি শরিফের একটি দুর্বল বর্ণনায় রয়েছে। আবার কেউ কেউ হিজরতের পূর্বে প্রতিবছরই হজ করার কথা উল্লেখ করেছেন।

 

মহান আল্লাহ সবাইকে নবী-রাসুলদের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র কাবাঘর জিয়ারত ও হজের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ট্যাগ :

যেভাবে হজ পালন করেছেন নবী-রাসুলরা

পোষ্টের সময় : ০৩:৫৩:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

 

পবিত্র হজ নবী-রাসুলদের স্মৃতিবিজড়িত ইবাদত। নানা আনুষ্ঠানিকতায় নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগেও হজের প্রচলিত ছিল। আইয়ামে জাহিলিয়াতে নগ্ন তাওয়াফসহ মক্কাবাসীরা কাবার চারপাশে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন এবং সেগুলোর উপাসনা, হজের মূলনীতির বিকৃতি ঘটায়।

 

ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক, হায়তামি ও ইবনে কাসিরসহ বেশির ভাগ বিশ্লেষকের মতে, হজরত হুদ (আ.) ও হজরত সালেহ (আ.) ছাড়া প্রায় সব নবী-রাসুল হজ করেছেন। -সিরাতে ইবনে ইসহাক, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া

 

হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) জান্নাত থেকে পৃথিবীতে আসার পর, অবশেষে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হন। ঘটনাটির কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আদমের বংশধর প্রতিবছর আরাফাতের প্রান্তরে কান্নাকাটির মাধ্যমে মহাপ্রভুর দরবারে উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।

ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত, হজরত আদম (আ.) বেহেশত থেকে ভারতবর্ষে অবতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি ৪০ বার পদব্রজে হজ করেন।

 

হজরত ইবরাহিম (আ.) ও বিবি হাজেরা এবং তাদের সন্তান হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর সাফা-মারওয়া সাঈ, মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ এবং কোরবানি আদায়ের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য হজের প্রচলন করেন।

হজ সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনা পাওয়া যায় বিভিন্ন সুরায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহিমকে সেই ঘরের (বায়তুল্লাহ) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম…আর মানুষের নিকট হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূরপথ পাড়ি দিয়ে। …তারপর তারা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, তাদের মানতসমূহ পূরণ করে এবং প্রাচীন ঘরের (বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ করে।’ -সুরা হজ: ২৬-২৯

 

হজরত মুসা (আ.) এবং ৭০ জন নবীর হজ নিয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রাওহা উপত্যকা দিয়ে ৭০ জন নবী পশমি কাপড় পরে হজ করতে গিয়েছিলেন এবং মসজিদে খায়ফে তারা নামাজ আদায় করেছিলেন। -বায়হাকি, মুসতাদরাকে হাকেম

হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, মসজিদে খায়ফে ৭০ জন নবী নামাজ আদায় করেছেন। হজরত মুসা (আ.) তাদের অন্যতম…তার গায়ে দুটি পশমি চাদর জড়ানো। তিনি দুই গুচ্ছ লাগামবিশিষ্ট উটের ওপর ইহরাম বেঁধে বসে আছেন। -তাবরানি

 

বায়তুল মোকাদ্দাস নির্মাণের পর হজরত সোলায়মান (আ.) মক্কায় হজব্রত পালন করেন বলে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। মক্কায় আবস্থানকালে তিনি প্রতিদিন পাঁচ হাজার পাঁচ হাজার করে উট, গরু, ছাগল কোরবানি করেন।

 

হজরত ঈসা (আ.)-এর হজের কথাও হাদিসে পাওয়া যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! মরিয়মপুত্র ঈসা অবশ্যই রাওহা উপত্যকায় হজ অথবা উমরা অথবা উভয়ের তালবিয়া পাঠ করবেন।’ -সহিহ মুসলিম

 

 

নবী মুহাম্মদ (সা.) চারবার উমরা, হিজরতের পর একবার ফরজ হজ করেছেন। হজরত কাতাদা (রহ.) বলেন, আমি হজরত আনাস বিন মালিক (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কতবার হজ করেছেন? তিনি বলেন, একবার। আর উমরা করেছেন চারবার। জিলকদ মাসে একবার। হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় একবার। হজের সঙ্গে একবার। আর একবার যখন তিনি হুনাইন জেহাদের গনিমতের মাল বণ্টন করেছেন।’ -সুনানে তিরমিজি

 

কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, হিজরতের আগে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দুইবার হজ করেছেন। যেমনটি তিরমিজি শরিফের একটি দুর্বল বর্ণনায় রয়েছে। আবার কেউ কেউ হিজরতের পূর্বে প্রতিবছরই হজ করার কথা উল্লেখ করেছেন।

 

মহান আল্লাহ সবাইকে নবী-রাসুলদের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র কাবাঘর জিয়ারত ও হজের তাওফিক দান করুন। আমিন।