০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক নজরে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট

 

২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এবারের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

 

উন্নয়ন ব্যয় ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমেছে

 

নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।

 

বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন কাঠামো

 

২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণ থেকে ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা।

 

পরিচালন ব্যয় ও ভাতা ঘোষণা

 

পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যয়ের বড় অংশ যাবে বেতন, ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধে। বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১০ থেকে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে।

 

কর কাঠামো ও করমুক্ত আয়ের সীমা

 

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরদিকে পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানিগুলোর করহার অপরিবর্তিত রয়েছে—২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

 

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ এবারও থাকছে। অপ্রদর্শিত অর্থ রেজিস্ট্রেশনে করহার কমিয়ে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পূর্বে ছিল ৮, ৬ ও ৪ শতাংশ।

 

করমুক্ত ব্যক্তিগত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত থাকছে। সাধারণ নাগরিকদের জন্য সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, নারীদের ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ৪ লাখ টাকা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ এবং এবার ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ জন্য নতুন করে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা

 

নতুন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের বছরের ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে কম। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে অর্জিত হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিয়ে এর লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যদিও এপ্রিল মাসে এটি দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।

 

সামাজিক নিরাপত্তা ও বরাদ্দ

 

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৯০ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা।

 

দাম বাড়ছে যেসব পণ্যের

 

নতুন বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে তার মধ্যে রয়েছে—নির্মাণসামগ্রী, প্লাস্টিক, টয়লেট সামগ্রী, বিদেশি মাছ, দুধজাত পণ্য, বিদেশি ফল, শিশুখাদ্য, দেশি মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, প্রসাধনী, সাবান, ডিটারজেন্ট, রড, ওটিটি সেবা এবং এলপিজি সিলিন্ডার।

 

দাম কমছে যেসব পণ্যের

 

অন্যদিকে কমছে—শিল্প কাঁচামাল, এলএনজি, দেশি স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার, প্যাকেটজাত তরল দুধ, কম্পিউটার মনিটর, হাসপাতাল যন্ত্রপাতি, ওষুধের কাঁচামাল, ব্যাটারি, কীটনাশক এবং সারসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম।

 

কর ছাড়ের আওতায় যেসব খাত

 

রিসাইক্লিং শিল্প, গ্যাস বিতরণ, ইন্টারনেট সেবা, বিদ্যুৎ ক্রয় এবং মোবাইল অপারেটরদের করহার হ্রাস করা হয়েছে। ব্যক্তিগত টার্নওভারের করমুক্ত সীমাও ৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

 

সার্বিকভাবে এবারের বাজেট ঘাটতি সীমিত রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সরকার রাজস্ব আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গুরুত্বারোপ করেছে।

 

ট্যাগ :

এক নজরে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট

পোষ্টের সময় : ১০:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

 

২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এবারের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

 

উন্নয়ন ব্যয় ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমেছে

 

নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।

 

বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন কাঠামো

 

২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণ থেকে ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা।

 

পরিচালন ব্যয় ও ভাতা ঘোষণা

 

পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যয়ের বড় অংশ যাবে বেতন, ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধে। বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১০ থেকে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে।

 

কর কাঠামো ও করমুক্ত আয়ের সীমা

 

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরদিকে পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানিগুলোর করহার অপরিবর্তিত রয়েছে—২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

 

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ এবারও থাকছে। অপ্রদর্শিত অর্থ রেজিস্ট্রেশনে করহার কমিয়ে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পূর্বে ছিল ৮, ৬ ও ৪ শতাংশ।

 

করমুক্ত ব্যক্তিগত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত থাকছে। সাধারণ নাগরিকদের জন্য সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, নারীদের ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ৪ লাখ টাকা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ এবং এবার ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ জন্য নতুন করে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা

 

নতুন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের বছরের ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে কম। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে অর্জিত হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিয়ে এর লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যদিও এপ্রিল মাসে এটি দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।

 

সামাজিক নিরাপত্তা ও বরাদ্দ

 

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৯০ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা।

 

দাম বাড়ছে যেসব পণ্যের

 

নতুন বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে তার মধ্যে রয়েছে—নির্মাণসামগ্রী, প্লাস্টিক, টয়লেট সামগ্রী, বিদেশি মাছ, দুধজাত পণ্য, বিদেশি ফল, শিশুখাদ্য, দেশি মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, প্রসাধনী, সাবান, ডিটারজেন্ট, রড, ওটিটি সেবা এবং এলপিজি সিলিন্ডার।

 

দাম কমছে যেসব পণ্যের

 

অন্যদিকে কমছে—শিল্প কাঁচামাল, এলএনজি, দেশি স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার, প্যাকেটজাত তরল দুধ, কম্পিউটার মনিটর, হাসপাতাল যন্ত্রপাতি, ওষুধের কাঁচামাল, ব্যাটারি, কীটনাশক এবং সারসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম।

 

কর ছাড়ের আওতায় যেসব খাত

 

রিসাইক্লিং শিল্প, গ্যাস বিতরণ, ইন্টারনেট সেবা, বিদ্যুৎ ক্রয় এবং মোবাইল অপারেটরদের করহার হ্রাস করা হয়েছে। ব্যক্তিগত টার্নওভারের করমুক্ত সীমাও ৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

 

সার্বিকভাবে এবারের বাজেট ঘাটতি সীমিত রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সরকার রাজস্ব আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গুরুত্বারোপ করেছে।