০৩:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোরবানির মাংস কতোটুকু খাবেন? সমস্যা হলে করণীয়

 

কোরবানির ঈদ মানেই পারিবারিক মিলনমেলা, আনন্দঘন পরিবেশ এবং সুস্বাদু খাবারের আয়োজন। আর এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মাংসের বাহারি রান্না। ঘরে ঘরে তৈরি হয় গরু, খাসি কিংবা ভেড়ার মাংস দিয়ে বিরিয়ানি, রোস্ট, কাবাবসহ নানান পদ। তবে উৎসবের খুশিতে অনেকেই খাবারের পরিমাণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে তেমন ভাবেন না। ফলে অতিরিক্ত লাল মাংস খেয়ে হজমের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনির জটিলতা দেখা দিতে পারে।

 

পরিমিত মাংস খাওয়া—স্বাস্থ্যকর ঈদের প্রথম ধাপ

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, লাল মাংস খাওয়ার বিষয়ে কিছু সতর্কতা মেনে চললে অনেক রোগ-জটিলতা এড়ানো সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সতর্ক করে বলেছে, প্রক্রিয়াজাত ও অতিরিক্ত লাল মাংস গ্রহণ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে কোলন বা অন্ত্রের ক্যানসারের ক্ষেত্রে।

 

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন যদি কেউ ৯০ গ্রাম বা তার বেশি লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংস খান, তাহলে তার ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। তুলনায় যারা দিনে গড়ে ২১ গ্রাম লাল মাংস খান, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক কম। তাই পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেন, দৈনিক সর্বোচ্চ ৮৫ গ্রাম বা ৩ আউন্স লাল মাংস গ্রহণ নিরাপদ—যা একটি কম্পিউটার মাউস বা তাসের একটি বান্ডিলের সমান।

 

কোন মাংস কতটা নিরাপদ?

 

যারা চর্বি ছাড়া মাংস খেতে চান, তাদের জন্য গরুর ‘রাউন্ড’ (Round) এবং ‘সিরলইন’ (Sirloin) অংশ দুটি বেশ উপযোগী। এসব অংশে প্রতি ১০০ গ্রামে চর্বির পরিমাণ গড়ে মাত্র ৪.২ থেকে ৮.২ গ্রাম, যা কিনা চামড়া ছাড়ানো মুরগির থানের মাংসের (৯.২ গ্রাম চর্বি) তুলনায়ও কম। তাই গরু, খাসি বা মুরগির মাংস খাওয়ার সময় দৃশ্যমান চর্বি বাদ দিয়ে কেবল মাংস খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

 

নিয়ম মানলেই সমস্যা নয়

 

ঈদের সময় অনেকে একাধিকবার মাংস খান, যা শরীরের জন্য বড় ধকল হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে এক বা দুই দিন লাল মাংস খাওয়াই স্বাস্থ্যসম্মত। মাংসের চাহিদা পূরণে বিকল্প প্রোটিনের উৎস যেমন মসুর, ছোলা, মটর, কিডনি বিন, বেকড বিনস ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে শরীর আরও ভালো থাকবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রক্রিয়াজাত মাংস—যেমন সসেজ, সালামি ইত্যাদি এড়িয়ে চলা।

 

হজমের সমস্যা হলে কী করবেন?

 

ঈদের আয়োজনে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে অনেক সময় পেটে গ্যাস, অস্বস্তি কিংবা বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যা কমাতে ঘরোয়া কিছু উপাদান বেশ কার্যকর হতে পারে:

 

পেঁপে: এতে থাকা ‘প্যাপেইন’ এনজাইম প্রোটিন হজমে সাহায্য করে। সালাদের সঙ্গে পেঁপে রাখলে হজমে উপকার মিলবে।

 

আনারস: ব্রোমেলেইন নামক উপাদানটি প্রোটিন ভাঙতে সহায়ক, যা হজমপ্রক্রিয়াকে করে আরও সহজ।

 

দই: দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া পেটের জন্য ভালো এবং হজমে সহায়ক। দই দিয়ে তৈরি বোরহানি ঈদের খাবারে রাখতে পারেন কোল্ড ড্রিংকের বদলে।

 

 

প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ

 

ঈদের সময় খাবার গ্রহণে ভারসাম্য না থাকলে হজমে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পেটব্যথা, গ্যাস, ডায়রিয়া বা বমির সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।

 

পরিশেষে,

 

ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে চাইলে খাওয়া-দাওয়ায় সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। পরিমিত মাংস গ্রহণ, চর্বি বাদ দিয়ে খাওয়া এবং হজমবান্ধব খাবার অন্তর্ভুক্ত করলেই এই উৎসব হয়ে উঠবে সুস্থ ও আনন্দময়। শরীর ভালো থাকলে ঈদের আনন্দ আরও দ্বিগুণ হয়—এটা ভুলে গেলে চলবে না।

 

ট্যাগ :

কোরবানির মাংস কতোটুকু খাবেন? সমস্যা হলে করণীয়

পোষ্টের সময় : ১২:১৩:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫

 

কোরবানির ঈদ মানেই পারিবারিক মিলনমেলা, আনন্দঘন পরিবেশ এবং সুস্বাদু খাবারের আয়োজন। আর এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মাংসের বাহারি রান্না। ঘরে ঘরে তৈরি হয় গরু, খাসি কিংবা ভেড়ার মাংস দিয়ে বিরিয়ানি, রোস্ট, কাবাবসহ নানান পদ। তবে উৎসবের খুশিতে অনেকেই খাবারের পরিমাণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে তেমন ভাবেন না। ফলে অতিরিক্ত লাল মাংস খেয়ে হজমের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনির জটিলতা দেখা দিতে পারে।

 

পরিমিত মাংস খাওয়া—স্বাস্থ্যকর ঈদের প্রথম ধাপ

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, লাল মাংস খাওয়ার বিষয়ে কিছু সতর্কতা মেনে চললে অনেক রোগ-জটিলতা এড়ানো সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সতর্ক করে বলেছে, প্রক্রিয়াজাত ও অতিরিক্ত লাল মাংস গ্রহণ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে কোলন বা অন্ত্রের ক্যানসারের ক্ষেত্রে।

 

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন যদি কেউ ৯০ গ্রাম বা তার বেশি লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংস খান, তাহলে তার ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। তুলনায় যারা দিনে গড়ে ২১ গ্রাম লাল মাংস খান, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক কম। তাই পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেন, দৈনিক সর্বোচ্চ ৮৫ গ্রাম বা ৩ আউন্স লাল মাংস গ্রহণ নিরাপদ—যা একটি কম্পিউটার মাউস বা তাসের একটি বান্ডিলের সমান।

 

কোন মাংস কতটা নিরাপদ?

 

যারা চর্বি ছাড়া মাংস খেতে চান, তাদের জন্য গরুর ‘রাউন্ড’ (Round) এবং ‘সিরলইন’ (Sirloin) অংশ দুটি বেশ উপযোগী। এসব অংশে প্রতি ১০০ গ্রামে চর্বির পরিমাণ গড়ে মাত্র ৪.২ থেকে ৮.২ গ্রাম, যা কিনা চামড়া ছাড়ানো মুরগির থানের মাংসের (৯.২ গ্রাম চর্বি) তুলনায়ও কম। তাই গরু, খাসি বা মুরগির মাংস খাওয়ার সময় দৃশ্যমান চর্বি বাদ দিয়ে কেবল মাংস খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

 

নিয়ম মানলেই সমস্যা নয়

 

ঈদের সময় অনেকে একাধিকবার মাংস খান, যা শরীরের জন্য বড় ধকল হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে এক বা দুই দিন লাল মাংস খাওয়াই স্বাস্থ্যসম্মত। মাংসের চাহিদা পূরণে বিকল্প প্রোটিনের উৎস যেমন মসুর, ছোলা, মটর, কিডনি বিন, বেকড বিনস ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে শরীর আরও ভালো থাকবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রক্রিয়াজাত মাংস—যেমন সসেজ, সালামি ইত্যাদি এড়িয়ে চলা।

 

হজমের সমস্যা হলে কী করবেন?

 

ঈদের আয়োজনে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে অনেক সময় পেটে গ্যাস, অস্বস্তি কিংবা বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যা কমাতে ঘরোয়া কিছু উপাদান বেশ কার্যকর হতে পারে:

 

পেঁপে: এতে থাকা ‘প্যাপেইন’ এনজাইম প্রোটিন হজমে সাহায্য করে। সালাদের সঙ্গে পেঁপে রাখলে হজমে উপকার মিলবে।

 

আনারস: ব্রোমেলেইন নামক উপাদানটি প্রোটিন ভাঙতে সহায়ক, যা হজমপ্রক্রিয়াকে করে আরও সহজ।

 

দই: দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া পেটের জন্য ভালো এবং হজমে সহায়ক। দই দিয়ে তৈরি বোরহানি ঈদের খাবারে রাখতে পারেন কোল্ড ড্রিংকের বদলে।

 

 

প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ

 

ঈদের সময় খাবার গ্রহণে ভারসাম্য না থাকলে হজমে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পেটব্যথা, গ্যাস, ডায়রিয়া বা বমির সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।

 

পরিশেষে,

 

ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে চাইলে খাওয়া-দাওয়ায় সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। পরিমিত মাংস গ্রহণ, চর্বি বাদ দিয়ে খাওয়া এবং হজমবান্ধব খাবার অন্তর্ভুক্ত করলেই এই উৎসব হয়ে উঠবে সুস্থ ও আনন্দময়। শরীর ভালো থাকলে ঈদের আনন্দ আরও দ্বিগুণ হয়—এটা ভুলে গেলে চলবে না।