মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ঘাঁটি থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের গুয়ামে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান। মাটির ২৬২ ফুট নিচে থাকা ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রতে হামলা চালাতে সক্ষম এ বিমানের নড়াচড়া শুরুর পরই হামলার শঙ্কা গভীর হয়েছে। এই বিমানটি ৩০ হাজার পাউন্ডের বাঙ্কার বাস্টার বোমা বহন করতে পারে। ইরানের ওই পারমাণবিক কেন্দ্রটি ধ্বংস করতে এমন বা এরচেয়েও শক্তিশালী বোমা দরকার।
জানা যায়, বি-২ বিমানের সঙ্গে ছিল চারটি বোয়িং কেসি-৪৬ পেগাসাস ফুয়েল ট্যাংকার। এর মধ্যে দুটি ইতিমধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরের আকাশে বি-২ বোমারুতে জ্বালানি সরবরাহ করেছে। বাকি দুটি প্রায় ৭৫ কিলোমিটার পেছনে অবস্থান করছে।
এ ছাড়া সান ফ্রান্সেসকোর উত্তরাঞ্চল থেকে আরও দুটি ট্যাংকার বিমান উড্ডয়ন করেছে। তারা বর্তমানে উত্তরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তী রিফুয়েলিং পয়েন্ট হিসেবে হাওয়াইয়ের দিকে রওনা হয়েছে।
বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোমারু বিমান যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্রগুলোর একটি। এটি অত্যন্ত গোপনে প্রবেশ করে শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাঝেও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। বিশেষ করে ইরানের মাটির নিচের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য এটি কার্যকরী।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ইরানকে নিয়ে কোনো সামরিক সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে মার্কিন বাহিনী তা বাস্তবায়নে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। হেগসেথ বলেন, ‘তেহরান যদি সময়মতো চুক্তির পথে না আসে, তাহলে যেকোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
প্রতিটি বি-২ বোমারুর মূল্য প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান। এটি তৈরি করেছে নর্থরপ গ্রুম্যান। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এখন পর্যন্ত মাত্র ২১টি বিমান উৎপাদন করা হয়েছে। এটি রিফুয়েলিং ছাড়া ৬ হাজার নটিক্যাল মাইল (প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার) দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।
বিমানটি প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড অস্ত্র বহনে সক্ষম, যার মধ্যে রয়েছে—জিডিএএম (JDAM)— এটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য জিপিএস-নির্ভর বোমা। জেএএসএসএম-ইআর (JASSM-ER)—এটি এমন ধরনের মিসাইল, যা ৮০০ কিলোমিটারের বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম। এ ছাড়া রয়েছে জেএসওডব্লিউ (JSOW) মিসাইল—যা লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি না গিয়েও দূর থেকে নিখুঁত হামলায় সক্ষম।
বি-২ বোমারু যুক্তরাষ্ট্রের নিউক্লিয়ার ট্রায়াড ব্যবস্থার অংশ। এটি সর্বোচ্চ ১৬টি বি-৮৩ পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম। এই ধরনের অস্ত্র পরিবহনের সময় স্টিলথ প্রযুক্তির কারণে শত্রুপক্ষ সাধারণত এর উপস্থিতি টের পায় না।
বি-২ বিমানে রাখা যায় ৩০ হাজার পাউন্ডের এমওপি (MOP) বোমা, যা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কনভেনশনাল (অপারমাণবিক) বোমা হিসেবে পরিচিত। এই বোমা ২০০ ফুটের বেশি কংক্রিটের নিচে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, যা ইরানের পারমাণবিক গবেষণা স্থাপনাগুলোর জন্য ভয়াবহ হুমকি।
এরমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার গলফ সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ রাতে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এছাড়া রোববারও তার আরেকটি বৈঠক করার কথা আছে। তারা হয়ত হামলার পরিকল্পনা পর্যালোচনা করবেন। কারণ বিমানগুলোর ইরানে গিয়ে হামলা চালাতে অনেকটা সময় প্রয়োজন হবে।